গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, আওয়ামী সরকারে আমলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ও সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউএবল এনার্জি ডেভেলপমেন্টের (স্রেডা) মত প্রতিষ্ঠানকে বামন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কার, নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি)।
তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানকে বামন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। আশা করছি এই জায়গা থেকে এই সরকার সরে আসবে। বিগত সরকারের সময়ে বিশেষ করে বিইআরসি, স্রেডার মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধীরে ধীরে খর্ব করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপিডিবি ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্বের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে একটা চক্র গড়ে উঠেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্ট, সরকার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের আমলা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোকজনকে নিয়ে চক্রটি গড়ে উঠেছিল। ফলে জাতীয় চাহিদা সম্পন্ন নীতি কখনো প্রণয়ন করা হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ব্যক্তি স্বার্থে বা গোষ্ঠী স্বার্থে। দেখতে চাই এই চক্র ভেঙে গেছে। নীতি ও আইনের ক্ষেত্রে সরকার তাদের অবস্থান জানাবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিরাপত্তা আইনসহ অনেক আইন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থ টার্গেট করা হয়েছে। আগামীতে আমরা এ ধরণের আইন দেখতে চাইনা।
জ্বালানি খাতের যেকোনো চুক্তি যেনো প্রতিযোগিতামূলক ভাবে করা হয় এ দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, চুক্তিগুলো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এক্টে দ্রুততর সময়ের মধ্যে যেনো হয়। সব বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম স্বচ্ছতার মাধ্যমে করা, জ্বালানি নীতি প্রণয়নকালে অংশীজনদের সঙ্গে রাখার দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রচলিত ধারণা আছে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র না হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি করা যায়না। এই জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। ক্ষুদ্র, মাঝারি কিংবা ছোট ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রর মাধ্যমেও যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ করা যায়, সেগুলোকে প্রাধিকার দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বিডাব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদি।
তিনি বলেন, অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইনের মত কালাকানুন স্থগিত করা হয়েছে। জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ ক্ষমতা পুনরায় বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের হাতে দেওয়াসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিগত সরকারের ভুল নীতি, দুর্নীতি, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ও দুর্বৃত্তায়ন বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে পতনের দ্বারে নিয়ে গেছে। যে খাত রাষ্ট্রের শক্তিশালী সম্পদ হওয়ার কথা ছিল, তা এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে তিনি জাতীয় জ্বালানি কমিশন গঠন, জ্বালানি খাতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা, জীবাশ্ম জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করা, কয়লা বন্ধের নীতি নেওয়া, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অচল হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে পিপিএ বাতিল করাসহ ২০ দফা দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান, ইথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের ম্যানেজার মুনীর উদ্দিন শামীম প্রমুখ।
এসএম/এসআইটি/জিকেএস