বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার, বড় বাধা জামায়াত

4 weeks ago 12

তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ ও যমুনায় ভাঙ্গন কবলিত সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির দুজন, জামায়াতে ইসলামীর একক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের মতো বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিও আসনটিতে ভাগ বসাতে চায়। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ইসলামি জলসা, খেলাধুলাসহ সব অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তারা নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিয়ে ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন চাইছেন।

নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আসনটিতে ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি প্রার্থী তিনবার, জাতীয় পার্টি দুইবার ও আওয়ামী লীগ পাঁচবার নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মফিজ উদ্দিন তালুকদার, ১৯৮৮ সালে একই দল থেকে শহিদুল ইসলাম খান, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি থেকে সহিদুল্লাহ খান এবং ২০০১ সালে এম মোজাম্মেল হক বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন।

দেড় দশক জনগণ ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিল। জুলাই বিপ্লবের পর অভূতপূর্ব ভোট উৎসব দেখার অপেক্ষায় মানুষ। তবে এবার আর দুর্নীতিগ্রস্ত, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত কাউকে ভোট দেবে না। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা বেশ সচেতন, তারা সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক মানুষকে মূল্যায়ন করবে।

অপরদিকে ১৯৯৬ সালের জুন ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, ২০১৪ সালে আব্দুল মজিদ মন্ডল, পরবর্তী ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তার ছেলে আব্দুল মমিন মন্ডল আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। যদিও ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত চৌহালী ও বেলকুচি উপজেলা পৃথক আসন ছিল। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলাকে একত্রিত করে সিরাজগঞ্জ-৫ আসন হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, দেড় দশক জনগণ ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিল। জুলাই বিপ্লবের পর অভূতপূর্ব ভোট উৎসব দেখার অপেক্ষায় মানুষ। তবে এবার আর দুর্নীতিগ্রস্ত, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত কাউকে ভোট দেবে না। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা বেশ সচেতন, তারা সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক মানুষকে মূল্যায়ন করবে।

দুর্দিনে সবসময় দলের পাশে ছিলাম। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখন জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও জনগণের খেদমত করার চেষ্টা করবো। এটি মূলত বিএনপির আসন। কিন্তু পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দখল করেছিল। আগামীতে আমরাই জয়ী হবো। মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

এ আসনে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের তৎপরতা ও সরব উপস্থিতি চোখে পড়লেও ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি।

এদিকে হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার মরিয়া বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম। তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় উপস্থিতি ও শোডাউনে জানান দিচ্ছেন নির্বাচনী তৎপরতা। একই সঙ্গে ভোটারদের কাছে আলোচনায় থাকার পাশাপাশি হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

আমিরুল ইসলাম খান আলীম জাগো নিউজকে বলেন, দুর্দিনে সবসময় দলের পাশে ছিলাম। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখন জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও জনগণের খেদমত করার চেষ্টা করবো। এটি মূলত বিএনপির আসন। কিন্তু পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দখল করেছিল। আগামীতে আমরাই জয়ী হবো। মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় যাচ্ছি। ওয়ার্ড কমিটি গঠনেরও কাজ চলছে। সাধারণ মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আর এই পরিবর্তন জামায়াতে ইসলামীর হাত ধরেই হবে। এ আসনের মানুষ এবার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে দাঁড়িপাল্লা প্রতীককেই ভোট দেবেন।

দলটির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় তাঁতীদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা গোলাম মওলা খান (বাবলু)। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, এ আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আমার চাচা সহিদুল্লাহ খান বিএনপি থেকে মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। শুধু তাই না, আবার বাবা আবু কোরাইশী খান বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমরা বরাবরই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি মূলত নদীভাঙন ও তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ এলাকা। অধিকাংশ ভোটার তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি পুনরুদ্ধার করে নদী ভাঙ্গন ও তাঁতিদের সমস্যা নিয়ে কাজ করবো।

আসনটিতে বিএনপির বড় প্রতিপক্ষ জামায়াতে ইসলামী। একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আলী আলম। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার দাবি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেলকুচি ও চৌহালীর মানুষ তার সঙ্গেই রয়েছেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় যাচ্ছি। ওয়ার্ড কমিটি গঠনেরও কাজ চলছে। সাধারণ মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। আর এই পরিবর্তন জামায়াতে ইসলামীর হাত ধরেই হবে। এ আসনের মানুষ এবার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে দাঁড়িপাল্লা প্রতীককেই ভোট দেবেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, এলাকার সন্তান হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি। তারা আমাকে অনেকটাই আপন করে নিয়েছেন। আমি আমার সাধ্যমতো তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

আসনটিতে ইসলামী আন্দোলনের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী হাজী শেখ মুহাম্মদ নুরুন নাবী ও গণঅধিকার পরিষদের সংগঠন শ্রমিক অধিকার পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি সোহরাওয়ার্দী হোসেন প্রার্থী হয়েছেন। তবে তাদের কোনো নির্বাচনী তৎপরতা নেই বললেই চলে।

এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬১। যার ২ মধ্যে লাখ ৪ হাজার ৩৮২ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৭৯ জন নারী।

এমএএম/এসএইচএস/জিকেএস

Read Entire Article