পাবনায় নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিবের বক্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
‘ধানের শীষের বাইরে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেবার কথা বলে সেখান থেকে কেউ সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারবে, আমার কাছে সেটা মনে হয় না’ বলে দলের নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাবিবুর রহমান হাবিব বক্তব্য দেন। এ বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তবে বক্তব্যের অসম্পূর্ণ অংশ ছড়িয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানোকে বিএনপির বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে মনে করছেন হাবিবুর রহমান হাবিব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (৯ আগস্ট) পাবনা-৩ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষকদল নেতা হাসান জাফির তুহিনের নির্বাচনী প্রচারণা সভায় অংশ নেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। জেলার ফরিদপুর উপজেলার ধানুঘাটা এলাকায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির এই নেতা। পরে এ বক্তব্যের খণ্ডাংশ বা অসম্পূর্ণ অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ভিডিওতে বিএনপির এই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘ধানের শীষের বাইরে কেউ দাঁড়িপাল্লাতে ভোট দেবার কথা বলে সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসবেন বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে, আমার তো সেটা মনে হয় না।’
তবে সম্পূর্ণ বক্তব্যের ভিডিও জাগো নিউজের হাতে এসেছে। এতে হাবিবুর রহমান হাবিবকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি মনে করি যত চেষ্টাই করুন না কেন, কেউ কেউ দূরে থাকতে পারে। এখন তো নৌকা নাই, কিন্তু ধানের শীষের বাইরে কেউ দাঁড়িপাল্লাতে ভোট দেবার কথা বলে সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসবেন বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে, আমার তো সেটা মনে হয় না। এত বছর অত্যাচারিত হচ্ছে, হাত নাই, চোখ নাই, পা নাই, বাড়ি নাই, ঘর নাই, পুকুর নাই—সব মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এতদিন পর একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা মনে করেছি, বাড়িতে থাকতে পারবো। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো। সেখানে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাকে ধানের শীষের বাইরে ভোট দিতে বলবেন? যে বলবে আমার মনে হয় বাসায় আসতেই তার কষ্ট হবে। এটা খুবই বাস্তব কথা। বিএনপির কর্মীরা এটা মানবেই না। কোনোভাবেই মানবে না। দু-একটা বাদে, যেখানে সারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল তারেক রহমানের সিদ্ধান্তকে এক বাক্যে মেনে নিচ্ছে।’
‘আমরা দল করে কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, এমপি হয়েছি। আমরা বড় বড় কথা বলছি, নেতা হইছি। আর সেই দলের সিদ্ধান্ত মানবো না? এখন তো সেই সময় না। এখন তো কঠিন সময়। এই সময়টা দলের বিরুদ্ধাচারণ করা...। ১৭-১৮ বছর পর ভোট দিতে পারবে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখানে বিএনপির পক্ষে ভোট না করে অন্য কারোর ভোট করার চেষ্টা যদি কেউ করে থাকেন, তবে আমি বলে যাচ্ছি-আজীবনের মতো বিএনপি থেকে বহিষ্কার হবেন। কোনোভাবেই আর দলে ফিরতে পারবেন না।’
বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাবনা-৩ আসনে আগামী নির্বাচনে হাসান জাফির তুহিনকে নির্বাচনমুখী কাজ করতে ও নেতাকর্মীদের তাকে সহযোগিতা করতে দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দলের কিছু নেতাকর্মী দলীয় নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করছেন বলে জানা যায়। তাদের উদ্দেশে আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি। বলেছি, দলের লোক হয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অন্য কোথাও ভোট করার সুযোগ নেই। করলে দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কোনো নেতা যদি কর্মীদের অন্য কোথাও ভোট দিতে বলে, তাহলে কর্মীরা ওই নেতাকে মানবে না। ভোট চেয়ে সুস্থভাবে ফিরে নাও আসতে পারে। এখানে একটি প্রতীকের কথা বলেছি। কারণ জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা ছাড়া এখন ওই এলাকায় তেমন প্রতীক নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই বক্তব্যকে কেটেকুটে জামায়াতের একটি চক্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। বিএনপির বিরুদ্ধে এটি স্পষ্ট ষড়যন্ত্র। এসব করে কোনো লাভ হবে না।’
এভাবে প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এ ধরনের বক্তব্য দলীয় গঠনতন্ত্রের কোনো অংশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় কি-না জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘কেন সাংঘর্ষিক হবে? জনসভায় তো বলিনি। ঘরের ভেতরে একটি সভায় বলেছি। এটা আমি বলতেই পারি।’
আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসআর/এমএস