বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে কুমিল্লার আদালতে রাজিব আহমেদ (৩৮) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একদিনে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। দায়েরকৃত ৫টি মামলার মধ্যে চারটি চাঁদাবাজি এবং একটি হুমকি দেওয়ার অভিযোগ।
বিবাদী রাজিব আহমেদ জেলার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের মৃত জারু মিয়ার ছেলে। তিনি অনলাইন ‘সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচয় দেন ও একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করেন।
মামলার বাদীগণের মধ্যে চারজন কায়কোবাদের অনুসারী এবং একজন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১১নং আমলি আদালতে ৪টি এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১০নং আমলি আদালতে ১টি মামলা করা হয়েছে।
চাঁদাবাজির চারটি মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মুরাদনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ। আর হুমকি দেওয়া মামলাটির আইনজীবী যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। আদালত পাঁচটি মামলাই আমলে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী তৌহিদুর রহমান।
মামলায় রাজিব আহমেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে চরিত্রহনন, হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি এবং মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। বাদীদের দাবি, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় তাকে জড়িয়ে তাদের (বাদী) বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এছাড়া চাঁদা দাবি করা হয়েছে।
আইনজীবী তৌহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, চাঁদাবাজির চারটি মামলা হয়েছে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১ নম্বর আমলি (মুরাদনগর) আদালতে। এর মধ্যে একটি মামলা আদালত থানার ওসিকে এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি তিনটি মামলা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আর হুমকি দেওয়ার মামলাটি হয়েছে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১০ নম্বর আমলি (চান্দিনা) আদালতে। এই মামলায় আদালত আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন বলেও জানান তিনি।
একটি মামলার বাদী মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের গোলাম মহিউদ্দিন। তার মামলাটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার আরজিতে মহিউদ্দিন উল্লেখ করেছেন, তিনি ঢাকায় গার্মেন্টস, পরিবহনসহ বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গত ৩১ জানুয়ারি রামচন্দ্রপুরে তার গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত রাজিব আহমেদসহ কয়েকজন ব্যক্তি তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করেছেন রাজিব।
মামলা দায়েরের পর কুমিল্লার আদালত প্রাঙ্গণে গোলাম মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মূলত কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলাটি করেছেন মুরাদনগর উপজেলার দিঘলদী গ্রামের মো. বাবুল মিয়া (৬৫)। মামলার এজহারে তিনি উল্লেখ করেন, ১ ফেব্রুয়ারি রামচন্দ্রপুর বাজারে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স সিয়াম ট্রেডার্সে গিয়ে রাজিবের নেতৃত্বে কিছু ব্যক্তি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ৬ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে তাকে ও কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের নামে রাজিব মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেন।
তৃতীয় মামলাটি করেন মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আলালের কান্দি গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিন (৫১)। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৮ জানুয়ারি মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর বাজারে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স হিমেল ট্রেডার্সে গিয়ে রাজিব ও তার সহযোগীরা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অস্বীকৃতি জানালে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ তাকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়।
চতুর্থ মামলাটির বাদী মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কাঁঠালিয়াকান্দা গ্রামের জয়নাল আবেদীন (৪৮)। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ১ ফেব্রুয়ারি রামচন্দ্রপুর বাজারে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির টেলিকমে এসে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন রাজিব ও তার সহযোগীরা। পরে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অস্বীকৃতি জানালে ৬ ফেব্রুয়ারি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদসহ তার বিরুদ্ধে রাজিবের পরিচালিত একাধিক ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো হয়।
এছাড়া পঞ্চম মামলাটি করেছেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কৈকরই গ্রামের মো. মনিরুজ্জামানের ছেলে ও সংবাদকর্মী মো. মহিউদ্দীন (২৮)। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, কয়েক মাস ধরে রাজিব আহমেদ তার একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে উদ্দেশ্যমূলক কনটেন্ট তৈরি করে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ইতঃপূর্বে মুরাদনগরের গুঞ্জর গ্রামের হাজি সোনা মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মো. জহিরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভুয়া কনটেন্ট তৈরি করে তাকে সামাজিক ও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেন। এ নিয়ে জহিরুল ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটা থেকে পৌনে নয়টা পর্যন্ত মুঠোফোনে তাকে জীবননাশের হুমকি দেন রাজিব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিব আহমেদ বলেন, আমি একজন সাংবাদিক। গোমতী টিভি নামে একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করি। যারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে এরা সবাই কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের লোক এবং তার নির্দেশেই একযোগে ৫টি মিথ্যা মামলা করেছে। মুরাদনগরে বিগত আওয়ামী লীগের সময় এসব লোক বিভিন্ন অপকর্ম করেছে। সরকার পতনের পর তারা এখন কায়কোবাদের ছত্রছায়ায় এসে অপকর্ম করছে। তথ্য-প্রমাণসহ তাদের বিরুদ্ধে আমি অনলাইনে সংবাদ প্রচার করেছি। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/এমএস