রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের পাশে রমনা থানা বিএনপির কার্যালয় ও কাউন্সিলের অফিস গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে মার্কেট তৈরি করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। ২০০৯ সালে বিএনপির সেই কার্যালয় ভেঙে ফেলার পর সেখানে ১০টির মতো দোকান তুলে ভাড়া তুলতেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
গত বছর ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হলে ওই ঘটনার প্রায় ১৬ বছর পর জড়িতদের বিরুদ্ধে গত সোমবার মামলা করেছেন তৎকালীন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রমনা থানার সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ।
মামলায় তৎকালীন আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকা সাচ্চু শেখ, সাবেক কাউন্সিলর কামরুজামান কাজল, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রইসুল ইসলাম ময়না, এমএ রহিম রানাসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে, ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে রমনা থানায় গত সোমবার মামলা করেছেন বিএনপি নেতা আরিফ। তিনি অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকেরও দায়িত্বে ছিলেন। মামলার আগে এই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনও করে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন এই বিএনপি নেতা।
জানা গেছে, আরিফুল ইসলাম আরিফের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ১১০ বছর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। দুই দফায় তিনি এই মামলায় ৮ বছর কারাগারে থাকার পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পান।
মামলার অভিযোগে আরিফুল ইসলাম আরিফ উল্লেখ করেছেন, ওই এলাকার কাউন্সিলর ও বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে থাকাবস্থায় সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুল থেকে স্কুলের নিজস্ব জায়গায় স্কুলের অনুমতিক্রমে তাদের জমিতে বিএনপির কার্যালয় গড়ে তোলেন। সেখানে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মাসিক ভাড়া বিদ্যুৎ ও পানির নিয়মিত বিল পরিশোধ করে আসছিলেন। পরবর্তীতে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে রায়ে তার ১১০ বছরের যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। প্রথমবার ২০০৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার দুইবছর পরে মুক্তি পান। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে গ্রেপ্তারের পর টানা ৬ বছর কারাগারে কাটে।
তিনি অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের পর মামলার আসামিরা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করার পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী এজাহারভুক্ত আসামি সাচ্চু শেখ, এম এ রহিম রানা, ড্রাইভার রানা, মফিজুল হক জন, সোয়েব চৌধুরী তপন, এ কে এম রফিকুজ্জামান চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, কামরুজ্জামান কাজল, নাহিদ, মানিকসহ অজ্ঞাত অনেক সন্ত্রাসীদের নিয়ে কার্যাধলয় ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে সেখানে দোকান পাট তুলে ভাড়া দেয় এই আওয়ামী লীগ নেতারা।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ভাঙচুরের সময় আওয়ামী লীগ নেতারা জিয়া পরিবারের সদস্যদের ছবি টেনেহিঁচড়ে খুলে ফেলে ছবিসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র পেট্রোল দিয়ে আগুন দিয়ে দেয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের সময় স্থানীয় স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বাধা দিতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা সাচ্চু শেখ পিস্তল বের করে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেন। পরে বুলডোজার দিয়ে কার্যাালয় গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া উপ-পরিদর্শক আবুল বাশার বলেন, মামলার বিস্তারিত এখনো জানতে পারিনি। দ্রুতই দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মামলার করার বিষয় নিয়ে বাদি বিএনপি আরিফুল ইসলাম আরিফ গণমাধ্যমকে বলেন, আমার দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। বাইরে থাকাবস্থায় আওয়ামী লীগের সময়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। আর মামলা করার পরিবেশও ছিল না। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা সরাসরি উপস্থিত থেকে বিএনপির কার্যালয় গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে দোকানপাট তৈরি করেছে। জড়িতদের অনেকেই এতদিন এলাকায় চলাচল করতেন। তাই এদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি কার্যারলয়টি আগের জায়গায় পুনস্থাপনের দাবি করছি। তিনি বলেন, জমিটি যেহেতু স্কুলের। তাই আমরা নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আবারও এখানে কার্যালয় স্থাপন করতে চাই।