যশোরের মণিরামপুরে বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ দুই পক্ষের ৫ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। গত দুইদিন ধরে উপজেলা পৌর শহরে এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে ১৫-২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি বর্ষণেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় পৌর শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
পুলিশ ও বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল ও সাবেক সভাপতি মো. মুছার অনুসারীরা। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য একপক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করছে।
বিএনপি, স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির মধ্যে দ্বিধা-বিভক্ত ও গ্রুপিং রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল ও অন্যপক্ষের নেতৃত্বে সাবেক সভাপতি মো. মুছা। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হওয়ার পরে এই গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, নেতাকর্মীদের প্রতিশোধ পরায়নতা, এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়েই মূলত এই দ্বন্দ্ব। এ বিরোধ পৌঁছেছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত। সেই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাতে পৌরশহরের রাজগঞ্জ মোড়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। একটি ওয়াজ মাহফিলে ১০-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার রাতে এটিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও আসবাবপত্র বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই পক্ষের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাসুদ রানার দোকান ভাঙচুর ও সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাংঙচুর করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মুছা পক্ষের অনুসারীরা উপজেলা বাজারে শোডাউন ও অবস্থান নেন।
এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার পর বাজারে অবস্থান ও শোডাউন দেয় ইকবাল গ্রুপ। এ সময় মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ইকবাল গ্রুপ। সেনাবাহিনী আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ইকবাল পক্ষ ও মুছা পক্ষের নেতাকর্মীরা পৌরশহরে মিছিল বের করলে পরিবেশ ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আতঙ্কে সাধারণ লোকজন ছুটাছুটি শুরু করে। দোকানপাটও বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।
মুছা পক্ষের উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, ৫ আগস্টের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইকবাল গ্রুপ। তারা এলাকায় রীতিমতো সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। আগে যারা ছাত্রলীগ করতো এখন তারা বিএনপি নেতা ইকবালের ছেলের সঙ্গে রাজনীতি করছে। তারা গত বুধবার রাতে একটি মাহফিলে কয়েকজনের সঙ্গে হাতাহাতি করেছে। ইকবাল গ্রুপের ছেলেরা যাদের সঙ্গে হাতাতাতি করেছে তারা আবার আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করে। সেই জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে মিছিল বের করেন তারা। মিছিল থেকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও বাজারে কয়েকটি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে। বাজার সড়ক অবরোধ করে। তারাই আবার শুক্রবার সকালে অবরোধ, মিছিল ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। ইকবাল গ্রুপের তাণ্ডবে পৌর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা ও জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
অপরদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল বলেন, উপজেলা বাজারে গত দুইদিন ধরে যা হয়েছে সব মুছার লোকজন করেছে। বাজারে বোমাবাজি করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে তারই লোকজন। এমনকি গতকাল দলীয় কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটাতে চেয়েছিল তার লোকজন। সেটি প্রতিহত করতেই আমার লোকজন মাঠে ছিল।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মো. মুছা স্বয়ং উপস্থিত থেকে অন্যের জমি দখল, গরু ছিনতাই করেছেন। পরের জমি দখল করে বিএনপির কার্যালয় করেছেন তিনি। আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ সব মিথ্যা।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মুছা বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মণিরামপুরে যত অপকর্ম ঘটছে, সেটা বিএনপি নেতা ইকবালের লোকজন করছে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা বাজারে যা ঘটছে সেটাও ইকবালের সরাসরি ইন্ধনে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এসব লিখিত আকারে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে মণিরামপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, কোনো পক্ষই এখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব ঘটনায় শহর উত্তপ্ত রয়েছে।
মিলন রহমান/এফএ/এএসএম