আসন্ন আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচন বাদ দিলে এ আসনটি বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে না থাকায় দুর্গটি ভাঙতে চায় জামায়াত। বর্তমানে ভোটের মাঠে রাজত্ব করছে দল দু’টি।
এ আসনের বিগত নির্বাচনগুলোতে নারী ভোটারদের ওপর বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন তা জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করছেন অনেকে। এর ফলে বিএনপির নারী ভোটারদের বড় অংশের ভোট পেতে পারে জামায়াতে ইসলামী। বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে তারা নারী ভোটারদের মাঝে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সময়ের নির্বাচন গুলোকে নির্বাচনই বলা ঠিক হবে না। ওই সময়ে জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগ ভাগাভাগির নির্বাচন করেছে। ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে না গেলেও তাদের ভোট কারচুপি করে ব্যালটে মেরে নেওয়া হয়েছে। আগামীতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই বেছে নেবে।
এরইমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ভোটের মাঠে নেমেছে জামায়াত। দলটির একক প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা মিজানুর রহমান। তিনি দলটির একক প্রার্থী হিসেবে অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।
- আরও পড়ুন
- ধানের শীষের টানাহ্যাঁচড়ায় ভারী দাঁড়িপাল্লা, এনসিপিও মাঠে
- ১৭ জন চান ধানের শীষ, দাঁড়িপাল্লা একজনের, স্বতন্ত্রও মাঠে
- টুকুতেই আস্থা বিএনপির, জামায়াতের জাহিদুল
আসনটিতে ১৯৮৬ সালে নুরুল ইসলাম তালুকদার জাতীয় পার্টি, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনছার আলী সিদ্দিকী বিএনপি, ১৯৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগের শাহজাহান, ২০০১ সালে বিএনপির মঞ্জুর কাদের, ২০০৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের চয়ন ইসলাম, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের হাসিবুর রহমান স্বপন ও ২০২১ এর উপ-নির্বাচনে মেরিনা জাহান কবিতা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ আসনের বিগত নির্বাচনগুলোতে নারী ভোটারদের ওপর বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন তা জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করছেন অনেকে। এর ফলে বিএনপির নারী ভোটারদের বড় অংশের ভোট পেতে পারে জামায়াতে ইসলামী।
এদিকে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত বিএনপির নির্বাচনী মাঠ এখনো অগোছালো। দলটির মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টি সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এম এ মতিনের ছেলে ডা. এম এ মুহিত। তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা. এম এ মুহিত জাগো নিউজকে বলেন, দলের দুঃসময়ে মাটি ও মানুষের নেতা হয়ে নেতা-কর্মীদের সার্বক্ষণিক পাশে ছিলাম। আশা করি, দল থেকে আমাকেই এ আসনে প্রার্থী করা হবে।
- আরও পড়ুন
- আশাবাদী কনকচাঁপা, বসে নেই অন্যরা
- বিএনপিতে গ্রুপিং-কোন্দল, মাঠে ছুটছেন জামায়াতের বুলবুল
- বিএনপির ঘাঁটিতেও প্রভাব বেড়েছে জামায়াতের
এ আসনের সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা হলেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মিল্ক ভিটার পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মনির, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ড্যাবের জেলা সভাপতি ডা. আব্দুল লতিফ ও শাহজাদপুর পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম আরিফ।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত বিএনপির নির্বাচনী মাঠ এখনো অগোছালো। দলটির মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টি সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এম এ মতিনের ছেলে ডা. এম এ মুহিতসহ বেশ কয়েকজন।
এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সাঈদ মোস্তাফিজ নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, এই আসনে বিএনপি ও জামায়াতের লড়াই হবে। তবে বিএনপি প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে খেসারত দিতে হতে পারে। যার সঙ্গে নেতাকর্মীদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে যার সবসময় ওঠাবসা এমন কাউকেই বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া উচিত। তাছাড়া নতুন দল হিসেবে এনসিপির কোনো প্রার্থীর নাম শোনেননি বলে জানান তারা।
তরুণ ভোটার কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মনের মতো কোনো প্রার্থী পাইনি। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে যে নির্বাচন হয়েছে সেগুলোতে ভোট দেইনি। এবার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করবে এমন প্রার্থী পেলে সবাই ভোট দিতে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ের নির্বাচন গুলোকে নির্বাচনই বলা ঠিক হবে না। ওই সময়ে জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগ ভাগাভাগির নির্বাচন করেছে। ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে না গেলেও তাদের ভোট কারচুপি করে ব্যালটে মেরে নেওয়া হয়েছে। আগামীতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই বেছে নেবে।
এ আসনের জামায়াতে ইসলামীর এক নারী সমর্থক ফিরোজা খাতুন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এতোদিন জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বলা হতো তারা ক্ষমতায় গেলে নারীদের ঘর থেকে বের হতে দেবে না। এটা এখন নারীদের কাছে স্পষ্ট যে, তাদের কোণঠাসা করতেই এই গুজব ছড়ানো হতো। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি করছে। তারা ঘরের বাইরে নারীদের কাজের সুযোগের পক্ষে কথা বলছে। শুধু তাই নয়, জামায়াত একটি শান্তিপ্রিয় সংগঠন।
জামায়াতের একক প্রার্থী মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার পালানোর পর সাধারণ মানুষ আমাদের ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। জনগণ জামায়াতকেই ভোট দেবে। কেননা ৫ আগস্টের পর জামায়াত কোথাও ভাঙচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত হয়নি। হাট বাজার ও গ্রামগঞ্জে গণসংযোগ করছি, মানুষের সাড়া পাচ্ছি।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
- প্রার্থী নিয়ে কোন্দল মিটেছে বিএনপির, সুযোগ খুঁজছে জামায়াত
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার বলেন, আমি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। সেই লক্ষ্যে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি। আশা করছি, সবদিক বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭৯। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৯০ ও নারী ভোটার ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৮৭ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন।
এমএএম/এসএইচএস/জিকেএস