বিএসসি-ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের রেষারেষির নেপথ্যে ‘চাকরি সংকট’

4 hours ago 4

# বিএসসি-ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দ্বন্দ্ব চরমে, নড়েচড়ে বসেছে সরকার
# দুই পক্ষের প্রধান টার্গেট দশম গ্রেডের ‘উপ-সহকারী প্রকৌশলী’ পদ
# বছরে ডিগ্রি নিয়ে চাকরির যুদ্ধে নামছে দুই লাখ নতুন প্রকৌশলী
# সরকারি খাতে ঝুঁকছেন প্রকৌশলীরা, বিপত্তি ‘সীমিত’ কর্মসংস্থানে

 রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চার বছরের স্নাতক কোর্স করেছেন আবু সুফিয়ান। ২০২০ সালে তার পড়ালেখা শেষ হলেও পছন্দমতো চাকরি পাননি। বর্তমানে তিনি দেশীয় একটি অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সেখানে যে বেতন পান, তাতে সন্তুষ্ট নন। তার লক্ষ্য সরকারি চাকরি।

দশম গ্রেডের কোনো পদ হলেও সরকারি চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সুফিয়ান। তবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেডে প্রবেশের সুযোগ খুবই সীমিত। কারণ এ গ্রেডে যত ইঞ্জিনিয়ারিং পদে সরকারি নিয়োগ হয়, তার অধিকাংশই ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তিনি।

আবু সুফিয়ানের ভাষ্য, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জব সিকিউরিটি নেই। জান-প্রাণ উজাড় করে দিয়েও কোনো কারণ ছাড়াই অনেক সময় চাকরি হারাতে হয়। আমাদের জন্য সরকারি চাকরির যে জায়গাগুলো রয়েছে, তাতে পদসংখ্যা খুবই সীমিত। দশম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে অনেক জনবল প্রয়োজন হয়। সেটা সব ডিপ্লোমাধারীরা পাচ্ছেন। একচেটিয়া তাদের দশম গ্রেড দিয়ে দেওয়ায় বুয়েট-রুয়েট-চুয়েট-কুয়েট থেকে পড়েও অনেকে বেকার।’

এ তো গেলো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের দুর্দশার কথা। একই রকম চিত্র ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রেও। অনেকটা হাতে-কলমে শিখেও চাকরি জুটছে না তাদের। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কেন তারা বেকার থাকবেন—সেই প্রশ্ন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মুখে মুখে।

তাদের ভাষ্য, ‘ডিপ্লোমা শেষে মোটামুটি একটা ভালো সরকারি চাকরির ক্ষেত্র বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী। এ জায়গাটা ডিপ্লোমাদের জন্য পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। এটা না করলে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তিরা বেকার থাকবে।’

শিক্ষাবিদরা বলছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেও দেশে কর্মসংস্থান নেই। সেই ‘দুশ্চিন্তা’ থেকেই মূলত বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে এ রেষারেষি। দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে কর্মসূচি-পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও এবার তা লজ্জাজনক অবস্থায় নেমেছে। দুই ধরনের ডিপ্লোমাধারীদের জন্য সম্মানজনক কর্মসংস্থান সৃষ্টিই হতে পারে এ সংকটের সমাধান।

প্রকৌশলীদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চরমে

তিন দফা দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও এই কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। মূলত এ আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি তারা রাতে কয়েক দফায় শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তাদের দাবির বিষয়ে সরকারের নড়চড় না দেখে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। আলটিমেটাম দিয়ে প্রথম দিনে ফিরে গেলেও দ্বিতীয় দিনের মতো বুধবার (২৭ আগস্ট) আবারও শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইডিইবি)। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন ঢাকা পলিটেকনিকসহ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা চলতি বছরের শুরু থেকেই আন্দোলন করে আসছেন। সম্প্রতি তারা গাজীপুরসহ দেশের সব পলিটেকনিকে টানা বিক্ষোভ ও সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।

jagonews24

দুই পক্ষের এমন অবস্থানের পর বুধবার সরকার চারজন উপদেষ্টার সমন্বয়ে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিটির সভাপতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, দুই দিক থেকে দাবি তোলা হয়েছে। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি একরকম, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি অন্যরকম। সব পক্ষের কথা শুনে ন্যায্য যে সমাধান, সেটা আমরা করবো।

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের যত দাবি

দেশের চারটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েট। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পড়ানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও প্রকৌশল অনুষদ রয়েছে, যেখানে অসংখ্য শিক্ষার্থী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা করে ডিগ্রি নিচ্ছেন।

বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থায় নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি পান। এ পদগুলোতে মূলত বিসিএসের মাধ্যমে প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৩১ থেকে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সময়ে আটটি সাধারণ বিসিএস হয়েছে। সেখানে সহকারী প্রকৌশলী পদ ছিল মাত্র ৪৬৮টি। অথচ প্রতি বছর চারটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল ডিগ্রি নিয়ে বের হয় প্রায় এক লাখ গ্র্যাজুয়েট।

বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ থাকলেও সেখানে অর্থনৈতিক ও চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ছাড়াই অনেক সময় চাকরি হারাতে হয়। ফলে সরকারি চাকরিতে ঝুঁকছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররাও। এমন বাস্তবতা থেকে তারা তিন দফা দাবি তুলেছেন।

সেগুলো হলো—নবম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা। দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে পারে। সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও (বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার) আবেদন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। এছাড়া শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যারা সম্পন্ন করবে তারাই যেন নামের সঙ্গে প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।

প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি এম ওয়ালীউল্লাহ বলেন, ‘বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পান দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তেমনি রুয়েট, চুয়েট, কুয়েটেও ভর্তি পরীক্ষায় মেধার পরিচয় দিয়ে যারা ভর্তি হন, কোর্স শেষ করেন; তাদের আপনি চাকরির পরীক্ষায় আবেদনই করতে দিচ্ছেন না। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে আবেদন করতে পারবে শুধুই ডিপ্লোমাধারীরা। আবার সহকারী প্রকৌশলীদের যে অল্পসংখ্যক পদ, সেখানে ডিপ্লোমাধারীদের ৩০ শতাংশ কোটা দিতে চাইছেন। তাহলে বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, কুয়েটের মেধাবীরা যাবে কোথায়?’

কোটা-পদোন্নতিসহ ৭ দাবি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের

দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে বছরে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তাছাড়া পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা কোর্স করার পর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) ভর্তির সুযোগ পান ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা। বছরে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে হাতে-কলমে শেখানোর অংশ বেশি। ফলে তারা নিজেদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তি দাবি করেন এবং সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে সংরক্ষিত আসন বা কোটা চেয়ে আসছেন। বর্তমানে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদগুলোতে শুধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা আবেদনের সুযোগ পান। এ সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি এর এক ধাপ ওপরের পদ সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ৩০ শতাংশ কোটা দাবিতে আন্দোলন করছেন। এছাড়া আরও পাঁচটি দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা।

আরও পড়ুন

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় আব্দুল আহাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররাই প্রকৃত প্রকৌশলী। আমরা হাতে-কলমে শিখছি, দক্ষতা অর্জন করছি। আমাদের জন্য জব সেক্টরে এনাফ স্পেস (চাকরির বাজারে জায়গা করে দেওয়া) না হলে দেশ এগোতে পারবে না। বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা যখন কর্মক্ষেত্রে যান, তারা ডিপ্লোমাদের কাছে ধরনা দেন। কারণ তারা তত্ত্বীয় বিষয়াদি পড়ে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে সুবিধা করতে পারেন না। তারপরও তাদের জন্য সহকারী প্রকৌশলী পদ অনেকটা সংরক্ষিত। ফলে তাদের দাবি যৌক্তিক নয়।’

বিএসসি ও ডিপ্লোমাধারীদের কার কোন পদে চাকরির সুযোগ

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সরকারি খাতে বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থায় বেশকিছু পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে। সেগুলো হলো—গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশল (নবম গ্রেড) ও সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (দশম গ্রেড)। এলজিইডি, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকো, পেট্রোবাংলা, রেলওয়ে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর, ওয়াসা সিভিল এভিয়েশন, শিক্ষা প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, বিসিসি, হাইটেক পার্কে সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের। এছাড়া সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে প্রভাষক পদেও নিয়োগের সুযোগ আছে।

jagonews24

অন্যদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তর, এলজিইডি, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পিডিবি, ডেসকো, নেসকো, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ওয়াসা, রেলওয়ে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, ক্যাব, বন্দর কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপ-সহকারী প্রকৌশল (দশম গ্রেড) পদে নিয়োগের সুযোগ পান ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। এছাড়া পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইনস্ট্রাক্টর/জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (দশম ও ১১তম গ্রেড) পদে এবং সশস্ত্র বাহিনীতে টেকনিক্যাল বিভিন্ন পদে তাদের নিয়োগের সুযোগ আছে।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাগত সংগঠন ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)। সংগঠনের অন্তর্বর্তী আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. কবীর হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররাই মাঠে কার্যকর ভূমিকা রাখছেন। আমাদের ৮ লাখ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। তারা দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন। অথচ বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা এ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সব খাত থেকে বাদ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এটা মেনে নেওয়া হবে না।’

‘চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতাই রেষারেষির মূল কারণ’

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দীর্ঘদিনের রেষারেষির মূল কারণ চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতা। এর সঙ্গে ‘ইগো’ও বড় কারণ। বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা ডিপ্লোমাধারীদের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিপক্ষে। তারা তাদের ‘ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট’ সম্বোধন করতে চান।

আর ডিপ্লোমাধারীদের দাবি, বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা শুধু তত্ত্বীয় পড়েন এবং লেখেন। তারা হাতে-কলমে কাজ শেখেন খুব কম। সেজন্য তারা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও কাজে তুলনামূলক কম পারদর্শী।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৌশল এমন একটি বিষয় যেখানে সব পক্ষকেই প্রয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন ডিসিপ্লিনের প্রকৌশলীরা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী হবে। এখানে সবাইকেই রাখতে হবে। একটি পদে শুধু ডিপ্লোমারা চাকরি পাবে, আবার আরেক পদে শুধুই বিএসসিরা পাবে; এ নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য সিলেবাস সংস্কার করা প্রয়োজন।

বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীদের কিছু বলতে চাই না। আমার শিক্ষার্থীরা যে দশম গ্রেডের চাকরির জন্য আজ রাস্তায় নেমেছে, সেটা ভাবতেই অস্বস্তি বোধ করছি। তবে তাদের আরও কিছু দাবি আছে, সেগুলোতে আমিও একমত। একই সঙ্গে এটাও সত্য যে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদটি শুধু ডিপ্লোমাধারীদের জন্য বরাদ্দ করে দেওয়াটা অন্যায়।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চাকরির বাজারের দিকে একটু দৃষ্টি দেন। দেখবেন, সেখানে সবার দৃষ্টি সরকারি খাতের চাকরির দিকে। যথাযথ দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করে সরকারি চাকরি পেলে চ্যালেঞ্জটা কমে গেলো। সবাই সেই শর্টকাট পথ খুঁজতে ব্যস্ত। কেউ দক্ষ জনশক্তি হয়ে ওঠার দিকে নজর দিচ্ছে না। কোনোমতে ডিগ্রিটা নিয়েই দশম গ্রেড বা নবম গ্রেডে চাকরি খোঁজাই প্রকৌশলীদের মধ্যে আজকের এ অবস্থার মূল কারণ।’

এএএইচ/ইএ

Read Entire Article