‘বিকেএসপিতে ফুটবলে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হয়ে গেলাম হকিতে’

হকির মেয়েদের সামনে ঐতিহাসিক মুহূর্তের হাতছানি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরে নতুন যুগে পা রাখবে দেশের নারী হকি। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন পরিকল্পনা করেছে আগামী এশিয়ান গেমসের বাছাইয়ে বাংলাদেশ নারী দলকে খেলানো। যদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথমবার খেলতে নামবেন হকির মেয়েরা। এখন পর্যন্ত বয়সভিত্তিক পর্যায়েই আন্তর্জাতিক হকিতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে মেয়েদের। গত জুলাইয়ে চীনের দাহুতে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে প্রথমবার অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই দলের অধিনায়ক ছিলেন শারিকা সাফা রিমন। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের এই উদ্যোগের কথা জেনে বেজায় খুশি বিকেএসপির এই শিক্ষার্থী। তার বিশ্বাস, এশিয়ান গেমসের বাছাইয়ে খেলা হবে তাদের। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন জুনিয়র দলের এই অধিনায়ক। অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়ান কাপে তৃতীয় হয়ে একবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে এবং আরেকবার ফেডারেশন থেকে অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন মেয়েরা। শারিকা সাফা রিমন এই টাকার চেয়ে খেলার সুযোগ পাওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন এবং নিজের হকিতে আসার গল্প নিয়ে তিনি একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজকে। জাগো

‘বিকেএসপিতে ফুটবলে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হয়ে গেলাম হকিতে’

হকির মেয়েদের সামনে ঐতিহাসিক মুহূর্তের হাতছানি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরে নতুন যুগে পা রাখবে দেশের নারী হকি। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন পরিকল্পনা করেছে আগামী এশিয়ান গেমসের বাছাইয়ে বাংলাদেশ নারী দলকে খেলানো। যদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথমবার খেলতে নামবেন হকির মেয়েরা। এখন পর্যন্ত বয়সভিত্তিক পর্যায়েই আন্তর্জাতিক হকিতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে মেয়েদের।

গত জুলাইয়ে চীনের দাহুতে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে প্রথমবার অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই দলের অধিনায়ক ছিলেন শারিকা সাফা রিমন।

বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের এই উদ্যোগের কথা জেনে বেজায় খুশি বিকেএসপির এই শিক্ষার্থী। তার বিশ্বাস, এশিয়ান গেমসের বাছাইয়ে খেলা হবে তাদের। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন জুনিয়র দলের এই অধিনায়ক। অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়ান কাপে তৃতীয় হয়ে একবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে এবং আরেকবার ফেডারেশন থেকে অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন মেয়েরা।

শারিকা সাফা রিমন এই টাকার চেয়ে খেলার সুযোগ পাওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন এবং নিজের হকিতে আসার গল্প নিয়ে তিনি একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাগো নিউজকে

জাগো নিউজ: আন্তর্জাতিক হকিতে বাংলাদেশ বয়সভিত্তিক কয়েকটি টুর্নামেন্ট খেলেছে। এখনো জাতীয় দলের কোনো প্রতিযোগিতায় অভিষেক হয়নি। ফেডারেশন চেষ্টা করছে আপনাদের এশিয়ান গেমস বাছাইয়ে খেলানোর। জানেন নিশ্চয়ই?

শারিকা সাফা রিমন: আমরা শুনেছি। স্যারেরা (কোচ) বলছিলেন, এশিয়ান গেমস বাছাইয়ে খেলা হতে পারে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় খবর। নারী হকিতে এখনো জাতীয় দল নেই। যদি এশিয়ান গেমসের বাছাইয়ে খেলার সুযোগ হয়, সেটা একটা মাইলফলক হবে দেশের নারী হকিতে।

জাগো নিউজ: জুলাইয়ে চীন থেকে খেলে আসার পর আর প্রতিযোগিতামূলক খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন?

শারিকা সাফা: না। তারপর তো আর খেলা হয়নি। আমরা বিকেসেপিতে অনুশীলন করি, এই যা। তবে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ব্র্যাক ব্যাংক অপরাজেয় আলো নারী হকির চূড়ান্ত পর্ব হবে ভাসানী স্টেডিয়ামে। সেখানে আমাদের বিকেএসপি দল খেলবে।

জাগো নিউজ: অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে ব্রোঞ্জ জিতে দুইবার অর্থ পুরস্কার পেলেন। তাতে কতটা অনুপ্রাণিত হয়েছেন?

শারিকা সাফা: দেখেন, টাকা অবশ্যই দরকার। তবে আমি মনে করি, টাকার চেয়ে আমাদের বেশি বেশি খেলার সুযোগ পাওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি খেলার সুযোগ না পাই, তাহলে টাকা দিয়ে কি হবে? তাই আমরা খেলতে চাই এবং বেশি বেশি খেলতে চাই।

জাগো নিউজ: তো হকি ফেডারেশনের কাছে আপনাদের কী দাবি?

শারিকা সাফা: যেটা বলছিলাম, আমরা যাতে বেশি বেশি টুর্নামেন্ট খেলতে পারি। তারা যেন টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। আমরা এখন পর্যন্ত ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে পারিনি। না খেললে পারফরম্যান্স কিভাবে দেখাবো? লিগ আয়োজন করলে আমরা নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে তৈরি করতে পারবো।

জাগো নিউজ: জাতীয় দলে খেলা নিয়ে আপনি কি স্বপ্ন দেখেন?

শারিকা সাফা: আমরা তো বিকেএসপিতে অনুশীলন করছি। এশিয়ান গেমসের বাছাই খেলার সুযোগ আসলে আমাদের লক্ষ্য থাকবে কোয়ালিফাই করা।

জাগো নিউজ: চীনে অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ খেলেছেন। তার আগে আপনার আন্তর্জাতিক হকি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল?

শারিকা সাফা: সিঙ্গাপুরে হওয়া সর্বশেষ এএইচএফ কাপে খেলেছিলাম। চীনে ছিল আমার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট।

Rimon

জাগো নিউজ: নারী হকির কথা বললে বড় করে সামনে আসে বিকেএসপির নাম। এখন বয়সভিত্তিক দল গঠন হয়ে থাকে এই ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়েই। কিভাবে দেখছেন এটাকে?

শারিকা সাফা: আসলে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে বিকেএসপির ওপরই নির্ভর করতে হয়। আমরা যে চীনে খেলতে গিয়েছিলাম, সেখানে কিন্তু বিকেএসপির বাইরে কোনো খেলোয়াড়ই ছিলো না।

জাগো নিউজ: আপনার নিজ জেলা নেত্রোকোনায় কি হকির চর্চা হয়?

শারিকা সাফা: আমাদের জেলায় লক্ষ্মীপুর নামে একটা জায়গা আছে। সেখানে হকির চর্চা আছে।

জাগো নিউজ: আপনার হকিতে হাতেখড়ি কি ওখানেই?

শারিকা সাফা: না না। আমি তো হকি খেলতাম না। আমি ছোট সময় খেলতাম ফুটবল। হকি খেলা কি তা জানতামই না।

জাগো নিউজ: খেলতেন ফুটবল, হয়ে গেলেন হকি খেলোয়াড়। গল্পটা তো মজার! কিভাবে হলো, যদি পাঠকদের সেই গল্প শোনাতেন।

শারিকা সাফা: বিকেএসপিতে আমার হকিতে ভর্তি হওয়া ছিল নাটকীয়ভাবে। আমি স্কুলে পড়া অবস্থায়ই ফুটবল খেলতাম। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টেও খেলেছি। আমার একটাই স্বপ্ন ছিল বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া। ভর্তি হতে গিয়েই ফুটবল ছেড়ে নাটকীয়ভাবে হকিতে নাম লেখাই।

জাগো নিউজ: বিকেএসপিতে ভর্তি হতে ফুটবলে ট্রায়াল না দিয়ে হকিতে দিয়েছিলেন তাই না?

শারিকা সাফা: ঠিক তা নয়। আমি ফুটবলে ট্রায়াল দিতেই বিকেএসপি এসেছিলাম। ফুটবলে ট্রায়াল দেই। পরদিন ছিল হকির ট্রায়াল। হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, হকিতেও ট্রায়াল দেবো। হকিস্টিক তো ধরতে পারতাম না। ট্রায়ালের আধাঘণ্টা আগে একজনের কাছে স্টিক ধরা শিখেছিলাম। তারপর ট্রায়াল দিলাম। ফুটবল ও হকি দুটোতেই টিকে গিয়েছিলাম চূড়ান্ত বাছাইয়ে। তারপর ভর্তি হলাম হকিতে।

জাগো নিউজ: কি চিন্তা করে ফুটবল বাদ দিয়ে হকিতে ভর্তি হলেন? আপনি তো ছোট সময় থেকে ফুটবলই খেলতেন।

শারিকা সাফ: ওই বছর প্রথমবার হকিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছিল বিকেএসপি। আমি হকির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ফুটবলে যেমন দর্শক হয়, টানটান উত্তেজনা থাকে- তেমন থাকে হকিতেও। আমি মনে করি, হকিতে আরও বেশি রোমাঞ্চ থাকে। শেষ ১০ সেকেন্ডেও গোল হয়ে যায়। ফুটবলের চেয়ে অনেক ফাস্ট খেলা হকি। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম হকিই খেলি।

জাগো নিউজ: এখন তো দেশের নারী ফুটবলে অনেক অর্জন। অনেক আলোচনায় নারী ফুটবল। আপনার কি কখনো মনে হয়, হকির পরিবর্তে ফুটবল খেললে ভালো হতো?

শারিকা সাফা: এখন সেটা মনে হয় না। তবে এটা ঠিক, ফুটবল যেভাবে স্পন্সর পায়, হকিতে সেভাবে পাওয়া যায় না। আমরা সে রকম স্পন্সর পেলে আরও উন্নতমানের ট্রেনিংয়েরও সুযোগ পেতাম। তখন হকিতে আরও ভালো রেজাল্ট করতে পারতাম। ফুটবলের মেয়েরা বিদেশি কোচের অধীনে উন্নতমানের অনুশীলন করে। আমাদের হকিতে তো সেই সুযোগ নেই।

জাগো নিউজ: আপনার পরিবারের কে কে আছেন? অন্য কেউ খেলাধুলার সাথে আছেন?

শারিকা সাফা: আমরা চার বোন ও এক ভাই। আমি সবার ছোট। আমার বাবা মো. ছামির উদ্দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আমাদের পরিবারের অন্য কেউ খেলাধুলা করেন না। আমার বাবা ও বড় বোনের উৎসাহ এবং সমর্থনেই আমি খেলাধুলা করতে পেরেছি।

জাগো নিউজ: ধন্যবাদ আপনাকে।
শারিকা সাফা: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/আইএইচএস/

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow