বিচারককে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. রুহুল আমিন শিকদারকে তাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। একইসঙ্গে সমিতিতে তার প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন শিকদার।
জানা গেছে, বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে একটি সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামির জামিনের জন্য বিচারকের বাসায় একটি খামে ৫০ হাজার টাকা ও মামলার নথিপত্র পাঠান পিপি রুহুল আমিন।
এ ঘটনায় বিচারক নীলুফার শিরিন অপমানিত বোধ করে বার কাউন্সিলের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, এর আগেও একই মামলার এক আসামির জামিনের জন্য রুহুল আমিন তাকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। এবার সরাসরি বাসায় ঘুষ পাঠানোয় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পিপি রুহুল আমিন আগেও বিভিন্ন মামলায় আসামিপক্ষের হয়ে তদবির করেছেন এবং আদালতের আদেশ প্রত্যাশামতো না হলে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করেছেন। আলোচিত জুলাই শহীদের মেয়েকে ধর্ষণের মামলাতেও (৩৭/২৫) তিনি আসামিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিচারকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা আইনজীবী সমিতি জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পিপি রুহুল আমিন শিকদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান এবং তার প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। সমিতির লিখিত সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন মন্ত্রণালয় ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী সমিতি কখনো ঘুষ, দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি প্রশ্রয় দেয় না। অভিযোগ পাওয়ার পরেই আমরা জরুরি সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন বলেছেন, ‘আমি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হওয়ার পর থেকেই নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি। এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
রুহুল আমিন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জামায়াতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য এবিএম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সদ্য জেনেছি। বিস্তারিত জানার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অভিযোগ সত্য হলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’