বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকা বিক্রিতে ভাটা, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত
মহান বিজয় দিবস সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও চট্টগ্রাম নগরীতে শুরু হয়েছে জাতীয় পতাকা বিক্রেতাদের হাঁকডাক। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি ঘুরে ফেরি করে পতাকা বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় হতাশায় পড়েছেন এসব ব্যবসায়ী। অনেকেরই আশঙ্কা, গাড়িভাড়া, থাকা-খাওয়ার খরচ উঠবে কি না, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা। সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বড় লাঠি বা পাইপের সঙ্গে ঝুলিয়ে আকারভেদে জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ছোট কাগজের পতাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাপের কাপড়ের পতাকা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায়। পাশাপাশি বিজয় দিবস লেখা মাথার বেল্ট, কপালে বাঁধার ফিতা ও অন্যান্য সামগ্রীও বিক্রি করছেন তারা। তবে এবার জাতীয় পতাকার পাশাপাশি অনেক বিক্রেতার কাছে বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় পতাকাও দেখা গেছে। বিক্রেতাদের ভাষ্য, জাতীয় পতাকার তুলনায় দলীয় পতাকার চাহিদা তুলনামূলক বেশি। নগরীর মনছুরাবাদ এলাকার খুদে ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন। সারা বছর তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে আচারের ব্যবসা করেন। গত এক দশক ধরে বিজয় দিবস
মহান বিজয় দিবস সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও চট্টগ্রাম নগরীতে শুরু হয়েছে জাতীয় পতাকা বিক্রেতাদের হাঁকডাক। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি ঘুরে ফেরি করে পতাকা বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় হতাশায় পড়েছেন এসব ব্যবসায়ী। অনেকেরই আশঙ্কা, গাড়িভাড়া, থাকা-খাওয়ার খরচ উঠবে কি না, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বড় লাঠি বা পাইপের সঙ্গে ঝুলিয়ে আকারভেদে জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ছোট কাগজের পতাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাপের কাপড়ের পতাকা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায়। পাশাপাশি বিজয় দিবস লেখা মাথার বেল্ট, কপালে বাঁধার ফিতা ও অন্যান্য সামগ্রীও বিক্রি করছেন তারা।
তবে এবার জাতীয় পতাকার পাশাপাশি অনেক বিক্রেতার কাছে বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় পতাকাও দেখা গেছে। বিক্রেতাদের ভাষ্য, জাতীয় পতাকার তুলনায় দলীয় পতাকার চাহিদা তুলনামূলক বেশি।
নগরীর মনছুরাবাদ এলাকার খুদে ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন। সারা বছর তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে আচারের ব্যবসা করেন। গত এক দশক ধরে বিজয় দিবসের আগে কয়েক দিন বাড়তি আয়ের আশায় পতাকা বিক্রি করেন।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে দেওয়ানহাট মোড় পতাকা ফেরি করার সময় তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে বিজয়ের মাস এলে সপ্তাহখানেক পতাকার ব্যবসা করি। এবার আমার সঙ্গে আরও ১০-১২ জন যুক্ত হয়েছে। ভোর ৬টায় বের হই, রাত ১২টায় ফিরি। এই পুরো দিনে এক হাজার টাকার পতাকাও বিক্রি হয় না। গত বছর দিনে ১৭শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। এবার বিক্রি একেবারে এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।’
তবে বিক্রি কমলেও বিজয়ের মাসে স্বাধীন সার্বভৌম দেশের পতাকা ফেরি করছেন, এটাই তার কাছে গর্বের বিষয় বলে জানান তিনি।
বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মো. জাকির বলেন, নির্বাচিত সরকার না থাকায় মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ কম। এটা কারণ হতে পারে।
নগরীর চৌমুহনী এলাকায় কথা হয় গোপালগঞ্জ থেকে আসা মো. সজিবের সঙ্গে। বাড়িতে টুকটাক কাজ করে সংসার চালালেও বাড়তি রোজগারের আশায় এবারই প্রথম চট্টগ্রামে পতাকা বিক্রি করতে এসেছেন তিনি। বেচাবিক্রির অবস্থা জানতে চাইলে লাজুক হাসি দিয়ে বলেন, ‘অবস্থা এত খারাপ যে আয়ের পরিমাণ বলতেও লজ্জা লাগে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সারাদিনে মাত্র ৩০ টাকার পতাকা বিক্রি হয়েছে। আজও একই অবস্থা।’
সজিব জানান, তার গ্রামের অনেকেই প্রতি বছর বিজয় দিবসের আগে চট্টগ্রামে এসে ভালো ব্যবসা করেন, এমনটা শুনেই তিনি এবার প্রথম চট্টগ্রামে আসেন। চারজন মিলে পাহাড়তলী এলাকায় একটি মেসে থাকছেন।
তিনি বলেন, ‘১১ ডিসেম্বর থেকে ফেরি শুরু করেছি। সকাল ৭টায় বের হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় ফিরি। যেখানে থাকি, সেখানকার বোর্ডিং ভাড়াই ১৫০ টাকা। লাভ তো দূরের কথা, থাকার খরচই উঠছে না।’
নগরীর নয়াবাজার মৌসুমি আবাসিক এলাকায় কথা হয় মো. সোহেলের সঙ্গে। হালিশহরের ফইল্ল্যাতলী বাজার এলাকায় তিনি ডেকোরেশনের কাজ করেন। গত সাত বছর ধরে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বাড়তি আয়ের আশায় পতাকা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘এবার বেচাবিক্রি একেবারেই নেই। মাথায় হাত পড়ে গেছে।’
পাহাড়তলী এলাকায় কথা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মো. ওমর ফারুকের সঙ্গে। এক যুগের বেশি সময় ধরে এই মৌসুমি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তিনি। এ বছর নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে ৪০ জন চট্টগ্রামে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আগে ভালো লাভ নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। এবার গাড়িভাড়া আর থাকা-খরচ উঠবে কি না, সেটাই বড় দুশ্চিন্তা।’
লালখান বাজার এলাকায় সড়ক বিভাজকের পাশে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আকৃতিতে পতাকা সাজিয়ে বিক্রি করছিলেন সত্তরোর্ধ মো. আবুল কালাম। সাত বছর ধরে বিজয়ের মাসে পতাকা বিক্রি করেন তিনি। রোববার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে বের হয়েছি। এখন পর্যন্ত চায়ের টাকাও ঠিকমতো ওঠেনি। তবে বিজয় দিবসের দিন হয়তো কিছুটা বিক্রি বাড়বে, এই আশাতেই বসে আছি।’
বিজয়ের মাসে লাল-সবুজের পতাকার বিক্রি কমে যাওয়ায় এভাবে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চট্টগ্রামের অসংখ্য মৌসুমি ব্যবসায়ী। এখন তাদের একমাত্র ভরসা মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর।
What's Your Reaction?