এস ইসলাম, লন্ডন থেকে
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে সরকারি জনকল্যাণ ভাতা ব্যক্তিগত ব্যবসায় বিনিয়োগের একটি অভিযোগ উঠে এসেছে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে। এর পরই লন্ডনের মেট্রো নিউজও এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসন সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের জন্য ‘জনসেবা-সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের ব্যয়’ ভাতা হতে নেওয়া বরাদ্দ নিজ ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন। এ খাত থেকে তিনি প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ডের ভাতা উত্তোলন করেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে সরকারি কাজে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন, ডাইনিং স্ট্রিট ত্যাগের পরও তিনি ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারি অর্থে বেতন পাওয়া জনসনের তিনজন কর্মী সরাসরি তার ব্যবসা ও মুনাফাভিত্তিক কার্যক্রমে সহায়তা করছেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অভিযোগ করা হচ্ছে, পরে তিনি সেই কর্মকর্তাকে লবিং করেন যেন জনসন নিজে কো-চেয়ার থাকা একটি প্রতিষ্ঠান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ব্যবসায়িক মিটিংয়ের সুযোগ পায়।
এছাড়া, অভিযোগ রয়েছে জনসন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো–এর সঙ্গে সাক্ষাতের পর একটি হেজ ফান্ড থেকে প্রায় ২ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড গ্রহণ করেন।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তাদের এই প্রতিবেদনে তথ্য এসেছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে রেজিস্ট্রিকৃত ডিস্ট্রিবিউটেড ডেনিয়াল অব সিক্রেট নামক একটি অলাভজনক হ্যাকার সংস্থা থেকে তথ্যসমূহ পেয়েছে।
মেট্রো নিউজ আরও জানায়, জনসন ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়ার পর যে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন, তার মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি ও ব্যক্তিগত ব্যয়ের সীমারেখা গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে যারা এখনও জনজীবনে সক্রিয় রয়েছেন, তারা প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৫ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড জনসেবামূলক কাজের জন্য সরকারি ভাতা দাবি করতে পারেন। তবে এই ভাতা শুধু অফিস পরিচালনা এবং সাচিবিক কাজের খরচ মেটানোর জন্য বরাদ্দ।
জনসন অবশ্য বলেছেন, তিনি নিয়ম মেনেই চলেছেন। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর জনসন দাবি করেন, এটি একটি বাজে কথা। প্রাপ্ত ভাতা পুরোপুরি নিয়ম মেনেই ব্যবহার হয়েছে। গার্ডিয়ানকে নাম বদলে ‘প্রাভদা’ রাখা উচিত।’
পাঁচজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী—টনি ব্লেয়ার, গর্ডন ব্রাউন, ডেভিড ক্যামেরন, টেরেসা মে এবং লিজ ট্রাস—একটি বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন, তারা সরকারি তহবিল ব্যক্তিগত ব্যবসার জন্য ব্যবহার করেননি। আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক অবশ্য এই ভাতা নেন না।
গর্ডন ব্রাউন বলেছেন, এখন নতুন নিয়ম প্রণয়নের সময় এসেছে যেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনে বিস্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অ্যাডভাইজরি কমিটি অন বিজনেস অ্যাপয়েন্টমেন্টস জানিয়েছেন, তারা জনসনের নতুন যোগাযোগ ও আয়ের বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা এনএওকে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ অফিসের মন্ত্রী নিক থমাস-সিমন্ডস বলেছেন, কোভিডে তার আচরণ যেমন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, অফিস ছাড়ার পর তার আচরণও লজ্জাজনক। কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাদেনক বলছেন, রাজনীতি ছেড়ে আসার পর মানুষদের অর্থ উপার্জনের অধিকার রয়েছে।
জনসনের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করা সত্ত্বেও, এ ঘটনা সরকারি ব্যবস্থার দুর্বলতা, নিয়মের অস্পষ্টতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি রোধে, স্বচ্ছতা ও নিয়ম কঠোরতর করা এ দেশের নৈতিক অঙ্গনে জরুরি পরিবর্তন। এখন দেখা যাক, জনসন তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কীভাবে খণ্ডন করেন।
এমআরএম/এএসএম