কোর্টে তারা একে অপরের তুমুল প্রতিপক্ষ, এক ইঞ্চিও কেউ কাউকে ছাড় দেননি কখনো; কিন্তু কোর্টের বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। তারা একে অপরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। রাফায়েল নাদাল আর রজার ফেদেরারের মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবদন্তিতুল্য হলেও তাদের বন্ধুত্বও কিংবদন্তিতুল্য।
ক্যারিয়ারে মোট ৪০ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলেন ফেদেরার-নাদাল। ২০২২ সালে অবসর নেন ফেদেরার। এ বছর অবসর ঘোষণা করলেন নাদালও। ডেভিস কাপে খেলে অবসর নেবেন তিনি।
ফেদেরার জীবনের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচটি খেলেছিলেন নাদালকে সঙ্গী করেই। মঙ্গলবার নিজের শেষ ম্যাচের আগে বন্ধু নাদালকে শুভেচ্ছা জানালেন ফেদেরার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখলেন সুইস তারকা।
ফেদেরার লেখেন, ‘আবেগে ভেসে যাওয়ার আগে তোমাকে কিছু বলার আছে। তুমি আমাকে অনেক ম্যাচে হারিয়েছো। আমি তোমাকে অত হারাতে পারিনি। তোমার মতো কেউ আমাকে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে ফেলেনি। লাল সুরকির কোর্টে খেলতে নেমে বারবার মনে হয়েছে, আমি তোমার ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছি। আমার খেলা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছ তুমি। তোমার বিরুদ্ধে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য আমি বড় র্যাকেট নিয়েও খেলতে নামতে বাধ্য হয়েছি। তুমি যেভাবে বোতল সাজিয়ে রাখতে, মনে হত ছোট ছোট সৈন্য, তোমার চুল ঠিক করা, অন্তর্বাস ঠিক করা, সব কিছুই তোমার খেলাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেত। চুপি চুপি জানিয়ে রাখি, আমি এসব কিছুরই ভক্ত ছিলাম। এগুলো সবই আমার কাছে খুব অনন্য ছিল। তোমার জন্য আমি টেনিসকে আরও বেশি করে ভালবেসেছি।’
৪০ বারের মধ্যে নাদালের কাছে ২৪ বার হেরেছেন ফেদেরার। জিতেছেন ১৬ বার। ফেড এক্সপ্রেস লিখেছেন, ‘২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর আমি বিশ্বের এক নম্বর হয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আমি পৃথিবীর মাথায় বসে আছি। পরের দু’মাস তেমনই মনে হচ্ছিল। এরপর তুমি মিয়ামিতে কোর্টে ঢুকলে লাল রঙের হাতকাটা জামা পরে, তোমার পেশিবহুল হাত দেখাতে দেখাতে। খুব সহজে হারিয়ে দিয়েছিলে আমাকে।’
সেবার ওই ম্যাচে হার্ড কোর্টে নাদাল তৎকালীন এক নম্বর ফেডেরারকে ৬-৩, ৬-৩ গেমে হারিয়ে দিয়েছিলেন।
২০ বছর টেনিস খেলার পর অবসর নিচ্ছেন নাদাল। তার সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী লিখেছেন, ‘আমরা প্রায় একসঙ্গে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। শেষও করছি প্রায় একসঙ্গে। ২০ বছর পর আমি বলতে চাই, তুমি কি অসাধারণ খেলোয়াড়! ১৪ বার ফরাসি ওপেন জিতেছ। ঐতিহাসিক! তোমার জন্য স্পেন গর্বিত। গোটা টেনিস বিশ্বকে গর্বিত করেছ তুমি। এখনও আমাদের একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা ভাবি। সেই অর্ধেক ঘাস এবং অর্ধেক সুরকির কোর্টে খেলা ম্যাচ, কেপটাউনে ৫০ হাজার দর্শকের সামনে খেলা। টেনিসের বিজ্ঞাপন করেছি আমরা একসঙ্গে। ম্যাচে আমরা একে অপরকে জমি ছাড়িনি, আবার কোর্টের বাইরে বন্ধুর মতো মিশেছি। আমি কৃতজ্ঞ, ২০১৬ সালে রাফা নাদাল অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে তুমি আমাকে ডেকেছিলে।’
ফেদেরারের সন্তানরা নাদালের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করে। সুইস তারকাও মনে করেন, নাদাল তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণা। মজা করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি চিন্তায় থাকি, আমার সন্তানেরা না বাঁ-হাতি হয়ে যায় তোমায় দেখে।’
ফেদেরার জীবনের শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন নাদালকে সঙ্গে নিয়ে। সেই অভিজ্ঞতার কথাও ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। সে সঙ্গে নাদালের উদ্দেশে ফেদেরার লিখেছেন, ‘তুমি সব সময় জানবে, তোমার জন্য চিৎকার করার জন্য আমি আছি। টেনিস থেকে অবসর নেওয়ার পর তুমি যা করবে, আমি তাতেও তোমার পাশে থাকব। আমি তোমার সব সময়ের ভক্ত।’
আইএইচএস/