বিদ্যালয়ের সামনে কসাইখানার দুর্গন্ধে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

3 hours ago 4

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা সদরে অবস্থিত এম এ করিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির সামনেই গড়ে উঠেছে বিশাল কাঁচাবাজার। প্রতিদিন বিদ্যালয়ের সামনে হাঁস, মুরগি, ছাগল জবাই করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এসবের দুর্গন্ধে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। ফলে ক্লাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে শিশুশিক্ষার্থীদের। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে দেয়ালঘেঁষা শাকসবজি দোকান, হাঁস-মুরগি ও ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রির অস্থায়ী দোকান। সরু এ পথটিতে দোকান বসায় চলাচলে সমস্যা হয় খুদে শিক্ষার্থীদের। আসা-যাওয়ার পথে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ তারা। বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে দেয়ালঘেঁষে ছাগলের জবাইখানা। লবণ দিয়ে রাখা হয়েছে ছাগলের চামড়া। সেখান থেকেও আসছে প্রচুর দুর্গন্ধ।

জানা গেছে, ২০০২ সালে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর আলাদাভাবে কাঁচাবাজার, মাংস, ডিম ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা শেড তৈরি করা হয়। বাজারের দক্ষিণ অংশে মাংসের দোকান। সবজি ব্যবসায়ীদেরকে বাজারের উত্তর অংশে স্থানান্তর করা হয়। যার পূর্বদিকে বিদ্যালয়টির অবস্থান। উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথ। বর্তমানে শাকসবজি বিক্রেতারা নির্ধারিত জায়গা ব্যবহার করছেন গোডাউন হিসেবে। আর দোকান বসেছে চলাচলের পথে।

রাস্তার ওপরে সবজি বিক্রেতারা রমজান আলী বলেন, আমরা এই জায়গায় (রাস্তায়) দোকান বসানোর জন্য ভাড়া পরিশোধ করি। ইজারাদার সাবেক কাউন্সিলর বাবুলের লোক এসে টাকা নিয়ে যায়।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার জানায়, ক্লাসের পাশে কসাইখানা থেকে দুর্গন্ধ আসে। দুর্গন্ধের কারণে ক্লাসে পড়ালেখার ক্ষতি হয়।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ইব্রাহিম আল হাসান জানায়, বিদ্যালয়ের চলাচলের রাস্তা সবজি দোকান বসিয়ে রাখে। আমাদের আসা-যাওয়া কষ্ট হয়। রাস্তা পার হতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নুরুন নাহার সোলতানা বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে বাজার স্থানান্তরের পর হাঁস-মুরগির দোকান ছিল না। উন্মুক্ত ছিল যাতায়াতের পথ। প্রথমদিকে হাটের দিন ঝুপড়ি নিয়ে বসত দোকানিরা। বিগত দুই বছরে সেই দোকানিরাই রাস্তাজুড়ে বসিয়েছেন স্থায়ী দোকান। দোকান সরাতে প্রতিবাদ করেও হয়নি কোনো কাজ। কয়েক দফায় উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলেনি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও চলাচলে প্রতিবন্ধকতায় অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র। ছাগল কসাইখানা থেকে দুর্গন্ধে বিদ্যালয়ের উত্তরাংশে শিশু শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণি কক্ষে পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে।

কিং শ্রীপুর গ্রামের হোমিও ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদ্যালয় রাস্তায় দিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হয়। বিক্রেতারা রাস্তায় বসে থাকে, চলাচল করতে অসুবিধা হয়। রাতের বেলা এখানে মদের আড্ডা চলে।

অভিভাবক আবুল হাসান বলেন, প্রতিদিন সকালবেলা আমার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে আসি। স্কুলের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় ব্যবসায়ীরা বসে থাকে। কিছু বললেই সবজি বিক্রেতা রেগে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা খাইরুল হাসান বলেন, আমরা সব সময় প্রতিবাদ করে আসছি চলাচলের রাস্তা যেন পরিষ্কার থাকে। কিন্তু হাঁস মোরগ ছাগলের মাংস বিক্রেতারা কোনো কথা শুনছে না।

চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা বাজারের ইজারাদার কাজী বাবুল বলেন, কোনো সবজি বিক্রেতাকে স্কুলের চলাচলের রাস্তায় বসে সবজি বিক্রি করতে বলা হয়নি। কেউ যদি তাদেরকে উঠিয়ে দেয় আমার আপত্তি নেই। সবজি বিক্রির নির্দিষ্ট শেডে তারা না বসে রাস্তায় বসে। কেউ বসলে উঠিয়ে দেওয়া হবে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রশিদ চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে হাঁস-মোরগ ও ছাগল জবাই করা হলে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। এ দুর্গন্ধ থেকে যে জীবাণু ছড়ায় তা পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হুদা তালুকদার বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় চলাচলের রাস্তায় সবজি বিক্রেতা, কসাইখানা ও দখলদারদেরকে সরিয়ে রাস্তা উন্মুক্ত করা হবে। যাতে করে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদানের পরিবেশ ফিরে আসে ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে আমাদের টিম বাজার পরিদর্শন করেছে। এটি আইনি প্রক্রিয়াধীন।

Read Entire Article