আগামী শিক্ষাবর্ষে (২০২৬ সাল) দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। অভিভাবক ঐক্য ফোরাম সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তি চালু রাখার দাবি জানিয়েছে। আর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই প্রক্রিয়া পুনর্বহালের পক্ষে মত দিয়েছেন।
এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এখনো কিছু জানায়নি। কর্তৃপক্ষ ‘চুপ’ থাকায় ভর্তি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছে অপতথ্য। ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশায় ১০ লাখেরও বেশি অভিভাবক। ভর্তিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে না কি লটারি হবে, সে প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
ভর্তির নীতিমালা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আগামী বছরের ভর্তি নীতিমালার বিষয়ে কোনো কাজ শুরু হয়নি। বুধবার (২৯ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি সভা আছে। আন্তবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সিদ্ধান্তেই ভর্তি নীতিমালা তৈরি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে কয়েক বছর ধরে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে আসছে সরকার। কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গত বছরও লটারি পদ্ধতি বহাল রাখা হয়।
শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, লটারি পদ্ধতি পরিবর্তন করা হলে আবারও ভর্তি বাণিজ্য মাথাচাড়া দেবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও আতঙ্কের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। অভিভাবকদের মধ্যেও উৎকণ্ঠা বাড়বে। ফলে অধিকাংশ কর্মকর্তারা লটারির পক্ষে গত বছর মত দেন।
পরীক্ষার পক্ষে শিক্ষকরা
দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লটারির পরিবর্তে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক আবেদনে তারা বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে চালু করা শিক্ষা বিধ্বংসী লটারি পদ্ধতি ২০২৬ সালেও বিদ্যমান থাকার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম মারফত অভিভাবকরা অবগত হয়েছেন। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিপক্ষে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের ক্ষেত্রে লটারি পদ্ধতিকে বিশেষভাবে দায়ী করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তা ও অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা লাঘবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে লটারি পদ্ধতি বাতিল করে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা পুনর্বহাল করা জরুরি। অন্যথায় ভবিষ্যতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, যা একান্তভাবে কাম্য নয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে লটারির পরিবর্তে ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২৬ সালের ভর্তি কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন
প্রাথমিকে সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নভেম্বরে
‘মিড ডে মিল’ চালু ১৭ নভেম্বর, খাবার পাবে ৩১ লাখ শিক্ষার্থী
ক্ষমতা বাড়ছে প্রধান শিক্ষকের, স্লিপ ফান্ডে বরাদ্দ বেড়ে ৩ লাখ
লটারি চায় অভিভাবক ফোরাম
শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষাকারী সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরাম লটারির মাধ্যমে ভর্তি নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া আজ এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন।
তারা বলেন, লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয়। এতে কোচিং ব্যবসা ও আর্থিক অনিয়ম অনেকাংশে কমে আসে। লটারির মাধ্যমে ভর্তি হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার চাপ ও কোচিং নির্ভরতা থেকে মুক্তি পাবে। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে পুনরায় প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা চালু করলে কোচিং বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে এবং অভিভাবকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের নেতারা আরও উল্লেখ করেন, ভর্তি নীতিমালায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের কোটা বাতিল করতে হবে। এতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় বৈষম্য, অনিয়ম ও দুর্নীতি কমে আসবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আসন কত
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে পাঁচ হাজার ৬২৫টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে শূন্য আসন সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ১৭ হাজার। বেসরকারিতে আসন সংখ্যা বেশি। সেই তুলনায় সরকারিতে আসন একেবারে কম। ফলে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে তুমুল প্রতিযোগিতা হবে।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোথায় শূন্য আসন কত, তার তথ্য নিয়েছে মাউশি। তাতে দেখা যায়, দেশের চার হাজার ৯৪৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে মোট ভর্তিযোগ্য আসন প্রায় ১০ লাখ আট হাজার। অন্যদিকে ৬৮০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে শূন্য আসন প্রায় এক লাখ নয় হাজার।
মাউশির সহকারী পরিচালক জিয়াউল হায়দার হেনরী জানান, গত বছর সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় মিলিয়ে মোট আবেদন জমা পড়েছিল নয় লাখ ৬৫ হাজার ৭০৪টি। সরকারিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল ছয় লাখ ২৫ হাজার ৯০৪ জন, যা শূন্য আসনের প্রায় ছয়গুণ। আর বেসরকারিতে ভর্তির জন্য আবেদন জমা পড়েছিল তিন লাখ ৪০ হাজারের মতো। ফলে সব শিক্ষার্থী ভর্তির পরও বেসরকারি বিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ আসন ফাঁকা পড়েছিল।
জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, ‘বেসরকারির ক্ষেত্রে আসলে সন্তানকে সবাই ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে চান। হাতেগোনা কিছু স্কুল ছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলের জন্য কোনো আবেদন জমা পড়ে না। সরকারি এবং ভালো বেসরকারি স্কুলে বেশি প্রতিযোগিতা হয়।’
এএএইচ/একিউএফ/এএসএম

8 hours ago
6









English (US) ·