বিনিয়োগবান্ধব করতে টেলিকম আইনে সংশোধন চান অংশীজনরা

3 months ago 47

দুই দশক পর টেলিযোগাযোগ আইন হালনাগাদ করছে সরকার। এজন্য আইনের একটি হালনাগাদ খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি আরও বিনিয়োগবান্ধব ও প্রয়োগযোগ্য হওয়া দরকার বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তাদের দাবি— খসড়া টেলিকম আইন যেন শুধু জরিমানা-নির্ভর না হয়ে বাস্তবায়নযোগ্য ও সহনশীল হয়। যা অন্তর্ভুক্তি ও সমন্বয় সুবিধার মাধ্যমে বিদ্যমান বিপত্তি কমাতে পারবে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আইনের খসড়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) স্বাধীনতাহরণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবসায়ের বিষয়টি যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মতো সর্বশেষ প্রযুক্তিও। এতে ভিন্ন ভিন্ন গাইডলাইনের সমন্বয়ের অভাবও প্রকট।

বুধবার (৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি বৈঠকখানায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ যাত্রায় নতুন টেলিকম আইন’ নিয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় এসব অভিমত তুলে ধরেন বক্তারা।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল অনুষদের অধ্যাপক সাইমন রেজা তালুকদার বলেন, আইনে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ডিজিটাল সেবা, ডাটা, জরিমানার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিষয় নজরে আনা হয়নি। আরবিট্রেশনের সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ না থাকা এবং দায়মুক্তির বিষয়টি রুলস অব ল’র পরিপন্থি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক বলেন, আজকের উন্নয়নে টেলিকমের অসামান্য অবদান রয়েছে। আমরা মনে করি— সংশোধিত টেলিকম আইনটি হবে সময়োপযোগী, উদার, বিশ্বের সেরা। এ আইনের বেস্ট প্রাকটিসের (উত্তম ব্যবহার) মাধ্যমে ভবিষ্যতে এটি ব্যবসাবান্ধব ও নাগরিকবান্ধব হয়ে উঠবে। এজন্য খসড়া আইন নিয়ে আজ যে প্রস্তাবনা এসেছে, তাতে কোনো মতবিরোধ নেই।

তিনি বলেন, লঘু পাপে গুরুদণ্ড জরিমানা, প্রতিষ্ঠান প্রধানের অজামিনযোগ্য শাস্তির বিধান রদসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে।

টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) সভাপতি ইয়াসির আজমান।

এছাড়া স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে মোবাইল অপারেটর ও আইএসপি ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইন মানুষের জন্য। আমি ক্ষমতা নয়, দায়িত্বে বিশ্বাসী। দায়িত্ব পালন করতে চাই নির্ভয়ে। এটা মিলিটারি শাসন নয়। স্বার্থরক্ষা করে মানুষের সেবা দিতে চাই।

অ্যামটব সভাপতি ইয়াসির আজমান বলেন, আমরা আশা করি, এ আইনটি হবে একই সঙ্গে নাগরিক, রাষ্ট্র ও ব্যবসাবান্ধব।

ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারী ও শিশুদের এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এ আইনের অজামিনযোগ্য ধারা, জরিমানার ভার ও সালিশি ব্যবস্থা রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে একটি স্মার্ট টেলিকম অ্যাক্ট করা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল হক ‘টেলিযোগাযোগ আইন ২০২৪’-এর খসড়া নিয়ে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, আইনে অশ্লীল কনটেন্ট আদান প্রদানের লঘুদণ্ড এবং টেলিফোনে আড়িপাতার মতো বিষয়কে হালনাগাদ করা এবং ই-কমার্স ও ওটিটির মতো স্মার্ট সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন ৯টি ধারণা।

পদাধিকার ধারায় টেলিকম সংযোগ সম্প্রসারণে যেকোনো জমি ব্যবহার সুবিধা যুক্ত হলেও কার্যক্রম না থাকা ৬টি ধারা বিলুপ্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।

রবির চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, ভিওআইপি ও তরঙ্গ বিষয়ক আইন বাস্তবায়ন সহজ নয়। এ আইনে আমরা আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ দেখছি না।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আইনে লাইসেন্স নবায়নে যেন বিটিআরসি থেকে মন্ত্রণালয়ে না পাঠানো হয়। একইভাবে আইনটি সংশোধন করে যেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাবান্ধব এবং শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজ হয়।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) জাকারিয়া শাহিদ বলেন, দেশে আমরা গাইডলাইন মেনে মোবাইল উৎপাদন করছি। অথচ বাজারে অবৈধ পণ্যের ছড়াছড়ি। এটা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আইনে এ অবৈধ মোবাইলের বাজার রোধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানি ইডটকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুনীল আইজ্যাক, গ্রামীণফোনের সিওও হ্যান্স মার্টিন, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, টেলিটকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মামুদ চৌধুরী, ফাইবার অ্যাটহোম পরিচালক আব্বাস ফারুক, সামিট কমিউনিকেশনের চিফ আর্কিটেক্ট অফিসার ফারুক ইমতিয়াজ, নগদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সজল জাহিদ প্রমুখ।

এএএইচ/এমএএইচ/জিকেএস

Read Entire Article