উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে সোমবার রাত পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচে ছিল, তবে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ও ৯টায় তা ২ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসে। দুপুরের মধ্যে আবার তা বেড়ে বিপৎসীমার ওপরে চলে যায়। ফলে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। ডালিয়া ব্যারাজে খুলে রাখা হয়েছে ৪৪টি জলকপাট।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, আগামী ৩ দিন এই অঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল বয়ে আসতে পারে। এতে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং দেখা দিতে পারে স্বল্পমাত্রার বন্যা।
এদিন দুপুরে তিস্তা ও ধরলা নদীর অন্যান্য পয়েন্ট পানি পরিস্থিতি হলো, কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং পাটগ্রাম পয়েন্টে ২৮৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে, পাটগ্রাম,হাতিবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নে ঢুকে পড়তে পারে পানি।
স্থানীয়রা বলছেন, পানি ওঠানামা করায় তারা চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের আব্দুল হাকিম বলেন, পানি কখনো বাড়ে, কখনো কমে। এখনো ঘরে ঢুকেনি, কিন্তু নদীর ধারে থাকা বাসাগুলোতে পানি উঠছে। পানি বাড়লে আমাদের ঘরেও ঢুকবে।
মহিষখোচা ইউনিয়নের সুলতানা বেগম বলেন, বৃষ্টি তো আছেই, যদি তিস্তার পানি আরও বাড়ে, তাহলে আমাদের এলাকায় আবার বন্যা হবে। এতে তৃতীয়বারের মতো ক্ষতি দেখব।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভারতের উজানে বৃষ্টিপাতের কারণে পানি বাড়ছে-কমছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহসীন ইসলাম শাওন/এমএন/জিকেএস