বর্তমানে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলায় ভাষণ শুরু করেন তিনি। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বহুভাষিকতাকে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরও গভীর করে। একবিংশ শতাব্দীতে কোনো সমাজেই ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা, বর্ণবাদ, বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ বা ইসলামবিদ্বেষের কোনো স্থান নেই।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং ঘৃণাত্মক বক্তব্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত বছর বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়ানো হয়েছে, যা এখনো চলমান রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিকল্পিত মিথ্যা সংবাদ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ‘ডিপফেক’-এর প্রসার, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে— যাতে এসব বিকৃত কর্মকাণ্ড মানুষের উপর মানুষের আস্থাকে বিনষ্ট না করে কিংবা সামাজিক সম্প্রীতিকে দুর্বল না করে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি সবসময় মানুষকে আশার বাণী শুনিয়েছি, কখনো ভয় দেখিয়ে কিছু করা আমি সমর্থন করিনি। কিন্তু আজ আমাকে সেখান থেকে সরে এসে ভয়ংকর কিছু কথা বলতে হচ্ছে। আজ আমি সতর্ক করছি— চরম জাতীয়তাবাদ, অন্যের ক্ষতি হয় এমন ভূরাজনীতি এবং অন্যের দুর্ভোগ ও পীড়নের প্রতি ঔদাসীন্য বহু দশকের পরিশ্রমে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি তা ধ্বংস করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এর সবচেয়ে মর্মান্তিক চিত্র আমরা দেখছি গাজায়। শিশুরা না খেয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করছে, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, হাসপাতাল, স্কুলসহ একটি গোটা জনপদ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সঙ্গে আমরাও একমত যে, আমাদের চোখের সামনেই একটি নির্বিচার গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে; আমাদের দুর্ভাগ্য যে মানবজাতির পক্ষ থেকে এর অবসানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের বিবেকবান নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমি আবারও জোরালো দাবি জানাচ্ছি যে, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমারেখার ভিত্তিতে, যেখানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে, তখনই ন্যায়বিচার সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হবে।