পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাণীগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমরা ময়ূর পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি। সাফারি পার্কে ময়ূর অবমুক্ত করা হয়েছে এবং প্রকৃতিতেও তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। মধুপুর শালবনে নতুন করে ১৫০ একর এলাকায় প্রকৃতিবান্ধব বনায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৩ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন ভবনে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য আমাদের গর্বের বিষয়, কিন্তু একই সঙ্গে এটি নানান হুমকির মুখে। তবে আশার বিষয়, ইতিবাচক অনেক পরিবর্তনও ঘটছে। একটি সুসংবাদ দিতে চাই। আমাদের বন অধিদপ্তরের জন্য নতুন ৩৬০টি পদের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের বন সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষার প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।
- আরও পড়ুন
- লোকালয়ে মেছোবাঘ, রিজার্ভ ফরেস্টে অবমুক্ত
- সীতাকুণ্ডে লোকালয়ে মা হরিণ, পরে উদ্ধার
- গারো পাহাড়ে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব চরমে
সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আগুনের পুনরাবৃত্তি রোধে আমাদের আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বনভূমি ও বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। আমরা চাই, চিড়িয়াখানাগুলো প্রাণীদের জন্য আরও উন্নত বাসস্থান হোক। সাফারি পার্কগুলোর কাঠামো পুনর্বিন্যাস করে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন প্রাণীগুলো মুক্ত পরিবেশে চলাফেরা করতে পারে। পাশাপাশি, সাফারি পার্কগুলোর চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হাতির করিডোর তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী মাস থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।
তিনি বলেন, এ বছর আমরা বহু মেছোবিড়াল উদ্ধার করেছি এবং প্রথমবারের মতো ‘মেছোবিড়াল দিবস’ পালন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা কেবল বন্যপ্রাণী ফিরিয়ে আনাই নয়, তাদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থলও নিশ্চিত করতে চাই। প্রকৃতি, বন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মানুষের সচেতনতা ও অংশগ্রহণই আমাদের মূল শক্তি।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্ব) মো. খায়রুল হাসান, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও দুবাই সাফারি পার্কের সাবেক প্রিন্সিপাল ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্যপ্রাণী বিষয়ে স্বতন্ত্র বিভাগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ‘এসো চিনি বন্যপ্রাণী’ এবং ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
আরএএস/ইএ/এএসএম