নিজেদের ঘর থাকতেও পরের ঘরে বসে কার্যক্রম চালাতে হয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের। শুধু সংস্কার ও নজরদারির অভাবে যশোরের মনিরামপুরের ১৮টি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার (এসএএও) কোয়ার্টার ও সিডস্টোর বিলুপ্ত হতে চলেছে। এতে একদিকে সরকারি মূল্যবান এই সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, অপরদিকে প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।
কৃষিতে বিপ্লব আনতে ৬০-এর দশকে আইয়ুব খানের শাসনামলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের থাকার জন্য এবং বীজ সংরক্ষণের জন্য এই কোয়ার্টার তৈরি হয়। কালের আবর্তে এই কোয়ার্টারগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সরকারি উদ্যোগে মাঠপর্যায়ে এই কোয়ার্টারগুলো উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বসবাসের উপযোগী করা হলে কৃষিতে আরও বৈপ্লবিক উন্নয়ন হতো বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আইয়ুব খানের শাসনামলে ১৯৬১ সালের ১৬ অক্টোবর এক অধ্যাদেশ বলে ইস্ট পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ইপিএডিসি) প্রতিষ্ঠার পর বীজ সংরক্ষণ ও বিপণনের উদ্দেশে এবং এসএএওদের থাকার জন্য এই কোয়ার্টার তৈরি হয়। দেশ স্বাধীনের পর এটি বিএডিসি (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) নামকরণ হয়। ৮০-এর দশক পর্যন্ত এই কোয়ার্টারে কার্যক্রম সচল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে সংস্কার-মেরামত এবং নজরদারির অভাবে কোয়ার্টারগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নে ১৮টি কোয়ার্টার রয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে বিলুপ্তি হতে চলেছে। যার জমির পরিমাণ ২ দশমিক ৮৫ একর। এর মধ্যে ১ দশমিক ৪৫ একর ডিএই (কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের) দখলে, এক একর জেলা প্রশাসক ও .১৬ একর সুবল চন্দ্র নামের এক ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের নেংগুড়াহাট বাজারে ১৩ শতক (কোয়ার্টার ও সিডস্টোরসহ) জমির মধ্যে ৭ শতক নিজেদের দাবি করে মামলা করেছে নেংগুড়াহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শ্যামকুড় ইউনিয়নের ঘুঘুরাইল বাজারে ১৪ শতক (কোয়ার্টার ও সিডস্টোরসহ) জমি নিজেদের দাবি করে মামলা করেছেন আশরাফ আলী গং, হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গা বাজারে ৪ শতক (কোয়ার্টার ও সিডস্টোরসহ) নিজেদের দাবি করে মামলা করেছেন নবীজান বিবি এবং কাশিমনগর ইউনিয়নে .১৬ একর (কোয়ার্টার ও সিডস্টোরসহ) সুবল চন্দ্র নামে এক ব্যক্তির অনুকূলে রেকর্ড হয়ে গেছে। সড়কের পাশে হওয়ায় এই জমির বাজারমূল্য চড়া।
জানতে চাইলে নেংগুড়াহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান জানান, সর্বশেষ মাঠ জরিপে তাদের সাত শতক জমি কৃষি অফিসের নামে রেকর্ড হলে তারা মামলা করেছেন।
সূত্রমতে, উপজেলায় পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নে ৫২ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাঠপর্যায় গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। ২০০৫ সালের আগ পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে তাদের বসার জায়গা ছিল না। পরে এনএটিপি (ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনিক্যাল প্রকল্প)-এর আওতায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে তাদের বসার সুযোগ হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোসা. মাহমুদা আক্তার জানান, মামলা সংক্রান্তসহ এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।