বিশ্ববাজারে দরপতন, তবু চট্টগ্রামে চালের দাম চড়া

আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ২০১৭ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাংক ও FAO–এর সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে চালের গড় দাম ৩১ শতাংশ কমেছে। থাইল্যান্ডে টনপ্রতি দাম কমে ৩৭৪ ডলার, ভারতে ৩৫৪ ডলার এবং ভিয়েতনামে ৩৫৬ ডলারে নেমেছে। উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদা কমে যাওয়াই এই দরপতনের প্রধান কারণ। তবে, বিশ্বব্যাপী দরপতনের সুফল বাংলাদেশের ভোক্তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে না। চট্টগ্রামের চাকতাই খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের দাম স্থবির বা উর্ধ্বমুখী অবস্থায় রয়েছে। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে বর্তমানে মোটা চালের দাম ৫২–৫৫ টাকা, মাঝারি চাল ৬০–৬৩ টাকা, এবং সরু চাল ৭৪–৭৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারি সংস্থা টিসিবি’র হিসাব অনুযায়ী, ১ জানুয়ারিতে মোটা চালের দাম ছিল ৫০–৫৫ টাকা, যা এখন ৫৪–৬০ টাকায় পৌঁছেছে। সরু চালের দাম জানুয়ারিতে ৭০–৮০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা ৭০–৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে কমেনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার টন চা

বিশ্ববাজারে দরপতন, তবু চট্টগ্রামে চালের দাম চড়া

আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ২০১৭ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বিশ্বব্যাংক ও FAO–এর সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে চালের গড় দাম ৩১ শতাংশ কমেছে। থাইল্যান্ডে টনপ্রতি দাম কমে ৩৭৪ ডলার, ভারতে ৩৫৪ ডলার এবং ভিয়েতনামে ৩৫৬ ডলারে নেমেছে। উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদা কমে যাওয়াই এই দরপতনের প্রধান কারণ।

তবে, বিশ্বব্যাপী দরপতনের সুফল বাংলাদেশের ভোক্তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে না। চট্টগ্রামের চাকতাই খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের দাম স্থবির বা উর্ধ্বমুখী অবস্থায় রয়েছে।

চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে বর্তমানে মোটা চালের দাম ৫২–৫৫ টাকা, মাঝারি চাল ৬০–৬৩ টাকা, এবং সরু চাল ৭৪–৭৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারি সংস্থা টিসিবি’র হিসাব অনুযায়ী, ১ জানুয়ারিতে মোটা চালের দাম ছিল ৫০–৫৫ টাকা, যা এখন ৫৪–৬০ টাকায় পৌঁছেছে। সরু চালের দাম জানুয়ারিতে ৭০–৮০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা ৭০–৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফলে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে কমেনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার টন চাল। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৫ লাখ টন।

চাল বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য। একটি পরিবারের মাসিক ব্যয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশই খাদ্যে যায়, যার বড় অংশ চাল। তাই দাম বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে। 

বিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত এক বছরে ধানের দাম ১১ শতাংশ, সরু চাল ১১ শতাংশ, মাঝারি চাল ১৩ শতাংশ এবং মোটা চাল ৭.৫ শতাংশ বেড়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে একই সময়ে দাম কমেছে ৩৬–৩৭ শতাংশ।

চট্টগ্রামের বাজার মূলত দেশের বড় উৎপাদন ও মিলকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি খাদ্যশস্য বাজার হওয়ায় এখানকার দামের ওঠানামা জেলার ছোট বাজারেও প্রভাব ফেলে।

চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, চট্টগ্রামে ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা পুরোপুরি নির্ভর করি দেশের বড় বড় মিল এবং দিনাজপুর ও নওগাঁর বাজারের ওপর। সেখানে যেমন দাম থাকে, চট্টগ্রামের বাজারও সাধারণত সেই হিসাবেই চলে।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনেক সময় আলোচনায় আসে, কিন্তু বাস্তবে দেশের বাজার পরিচালিত হয় মূলত অভ্যন্তরীণ মিলগেট দর ও ভারতের বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী।

সরেজমিনে চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত ১০ দিনে পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি গড়ে ৩ টাকা বেড়েছে। নাজিরশাইল চাল ৭০ টাকা, ইন্ডিয়ান কাটারি সিদ্ধ ৬৯ টাকা, এবং ইন্ডিয়ান স্বর্ণা ৫১ টাকা কেজিতে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। ২৫ কেজির বস্তার দাম বেড়েছে ৫০–৬০ টাকা পর্যন্ত। এই প্রভাব ইতোমধ্যে খুচরা বাজারেও পড়েছে।

সরকার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতি কেজি দরে এ চাল আনতে খরচ হবে ৪২.৯৮ টাকা, যার মোট খরচ ২১৪ কোটি ৯০ লাখ ৯ হাজার ৮৬০ টাকা। চালগুলো ২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতের নিউট্রিয়াগ্রো ওভারসিজ ওপিসি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে সংগ্রহ করা হবে।

সরকারি ক্রয়ের দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের বাজারদরের তুলনা করলে বড় ব্যবধান দেখা যায়। সরকারি হিসাবে কেজিতে ৪৩ টাকার কাছাকাছি দাম থাকা চাল বাজারে ৫০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেটে কিছুটা দাম কমলেও সুবিধা পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আটকে যাচ্ছে।

উত্তরাঞ্চলের হিলি স্থলবন্দরের পরিস্থিতি একই রকম। ১–৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৪৫,৪১০ টন চাল এসেছে। আমদানির সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বাজারে দাম ৫–৬ টাকা বেড়ে যায়। এই প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বড় বাজারেও।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসি জানায়, এক পরিবারের খাদ্য ব্যয়ের বড় অংশ চাল, তাই মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যেখানে আমদানিকারকদের নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রির বাধ্যবাধকতা দেয়, সেখানে বড় মিলগুলোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হয় না। এতে বাজারে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয় এবং দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

সাধারণ ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, মিলার, বড় ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের ওপর কার্যকর নজরদারি না থাকায় মিলগেট ও খুচরা দরের ব্যবধান অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো মূলত ছোট খুচরা বাজারে অভিযান চালালেও বড় মিল ও বিশাল গোডাউনে মজুত থাকা চালের বিষয়ে কার্যকর তদারকি নেই। যখন দাম বেড়ে যায়, তখনই সেই মজুত বাজারে ছাড়া হয়।
 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow