রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ করার পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছেন কলেজগুলোর শিক্ষকরা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের ব্যানারে এ কর্মসূচি করেন তারা।
সাত কলেজ স্বাতন্ত্র রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থেকে সাত কলেজকে অব্যাহতি দেওয়ার পর একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু হঠাৎ পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন কাঠামোর খবর জানানো হয়, যা কলেজগুলোর সক্ষমতা সংকোচন ও শতবর্ষের ঐতিহ্য ধ্বংসের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এর পরিপন্থী হবে। নীতিতে যেখানে কলেজগুলোর অবকাঠামো, গ্রন্থাগার, ল্যাব উন্নয়ন এবং উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে, সেখানে উল্টোভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংকুচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মানববন্ধনে অন্য শিক্ষকরা বলেন, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ সাতটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ বহু দশক ধরে স্বল্প খরচে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে লাখো শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংকুচিত করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে পড়বে, বিশেষ করে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে এটি ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
শিক্ষকরা আরও বলেন, ইডেন ও বদরুন্নেসার মতো কলেজগুলো রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষায় অন্যতম ভরসাস্থল। এসব কলেজের অবস্থা পরিবর্তন করলে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা বিস্তার ও সংবিধানের ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৪) অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য ধারার লঙ্ঘন ঘটবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি ৪.৩ ও ৪.৪) এবং জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রতিশ্রুতিরও পরিপন্থী হবে।
তারা বলেন, অধ্যাদেশ প্রণয়নের আগে যদি সব অংশীজনের মতামত ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে বড় ধরনের শিক্ষার্থী আন্দোলনের ঝুঁকি তৈরি হবে। ইডেন কলেজের সাম্প্রতিক আন্দোলন তারই প্রমাণ।
রংপুরের ঐতিহাসিক কারমাইকেল কলেজের উদাহরণ তুলে ধরে শিক্ষকরা জানান, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের আইন পাস হলেও আন্দোলনের মুখে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে আলাদাভাবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কারমাইকেল কলেজকে কলেজ হিসেবেই রাখা হয়।
শিক্ষকরা কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, সাত কলেজের বিদ্যমান অবকাঠামো ও মানবসম্পদ কাজে লাগিয়ে কলেজিয়েট বা অধিভুক্ত কাঠামোতে পরিচালনার ব্যবস্থা করা হোক। প্রশাসন থেকে পাঠদান পর্যন্ত দায়িত্বে থাকুক শিক্ষা ক্যাডার। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা বাজেট, ল্যাব ও লাইব্রেরি সুবিধা বৃদ্ধি, আবাসন সংকট নিরসন ও বৃত্তি সুবিধা নিশ্চিত করে গুণগত উচ্চশিক্ষা বজায় রাখতে হবে।
মানববন্ধনে সাত কলেজের শিক্ষক, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের নেতা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এএএইচ/এসএনআর/এমএস