বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি বসাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

1 month ago 9

চাঁদের বুকে প্রথম পারমাণবিক চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফি সম্প্রতি একটি নির্দেশনায় এ পরিকল্পনাকে জরুরি অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চাঁদে টেকসই উপস্থিতি গড়ে তোলার দৌড়ে চীন ও রাশিয়ার আগেই এগিয়ে যাওয়াকে এই নির্দেশের মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের হাতে পাওয়া ৩১ জুলাইয়ের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চীন ও রাশিয়া অন্তত তিনবার যৌথভাবে চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ও ২০৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তারা এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে চায় নাসা। এই উদ্যোগের খবর প্রথম প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো।

ডাফি মঙ্গলবার ( আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা এখন চাঁদে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতায় আছি আমাদের প্রতিপক্ষ চীন। চাঁদে ঘাঁটি স্থাপন করতে চাইলে শক্তি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক।

নাসার আর্টেমিস কর্মসূচির তৃতীয় মিশন আর্টেমিস-৩এর মাধ্যমে ২০২৭ সালে চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর আবারো চাঁদে মার্কিন পদার্পণের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। তবে এখনো বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোনো বাকি। আর দীর্ঘমেয়াদে চাঁদে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, যা পারমাণবিক শক্তি থেকেই নিশ্চিত করা সম্ভব।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৩০ দিনের মধ্যে এই প্রকল্পের জন্য একজন নির্বাহী নিয়োগ দিতে হবে, যিনি পুরো কর্মসূচির দায়িত্বে থাকবেন।

এর আগে নাসা যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ফিশন সারফেস পাওয়ার’ প্রকল্পে কাজ করেছিল। ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল চাঁদে কমপক্ষে ৪০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সিস্টেম তৈরি করা, যা দিয়ে প্রায় ৩০টি গৃহস্থালি একটানা ১০ বছর চালানো সম্ভব।

চাঁদে দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ বসবাসের পরিকল্পনায় পারমাণবিক চুল্লি বিশেষ সহায়ক হবে বলে মনে করছে নাসা। তবে সদ্য ঘোষিত পরিকল্পনায় এখনো চাঁদের বুকে নির্দিষ্ট ঘাঁটি স্থাপনের সময়সীমা নির্ধারিত হয়নি। নাসার তথ্য অনুযায়ী, চাঁদের বুকে দীর্ঘমেয়াদি মানব উপস্থিতির জন্য অন্তত ১০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন।

ডাফি বলেন, শক্তির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আমরা যদি চাঁদে জীবনধারণ করতে চাই ও সেখান থেকে মঙ্গল গ্রহে যেতে চাই, তাহলে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এটি শন ডাফির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হিসেবে নাসার প্রথম বড় ধরনের উদ্যোগ। যদিও একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন নিয়েও ডাফি সমালোচনার মুখে পড়েছেন, কারণ চলতি বছর মার্কিন বিমান পরিবহন নিরাপত্তা ইস্যুতে একাধিক সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া ডাফি সম্প্রতি দ্বিতীয় আরেকটি নির্দেশনাও দিয়েছেন- যার ফলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বিকল্প হিসেবে একটি বাণিজ্যিক স্পেস স্টেশন গড়ে তোলার কাজ ত্বরান্বিত হতে পারে। এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আরও প্রস্তাব আহ্বান করা হবে ও ছয় মাসের মধ্যে কমপক্ষে দুটি সংস্থাকে চুক্তি প্রদান করা হবে।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) দিন দিন বয়স্ক হয়ে উঠছে, যার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিকবার ছিদ্র হয়ে যাওয়া ও যান্ত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটিকে অবসর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পারমাণবিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাঁদে শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে শুধু টিকে থাকার ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যৎ আন্তঃগ্রহ অভিযানের জন্যও এটি একটি কৌশলগত অগ্রগতি হয়ে উঠবে। আর এর মাধ্যমেই মহাকাশ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব আরও একবার সুদৃঢ় হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সূত্র: সিএনএন

এসএএইচ

Read Entire Article