বিষণ্নতা নাকি শুধুই ক্লান্তি
ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা এবং ঘুমের অভাব—এই দুটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। অনেক সময় এ দুটিকে আলাদা করা কঠিন, তবে কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় কখন আপনার ক্লান্তি শুধু ঘুমের অভাব নয়; বরং আরও গভীর কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাধারণভাবে আমরা ঘুম কম হলে শরীর ও মন দুটোই ক্লান্ত ও ঝিমঝিম ভাবের শিকার হয়। কিন্তু সত্যিকারের ক্লান্তি আর বিষণ্নতার মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention) জানিয়েছে, দেশটিতে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন যথেষ্ট ঘুম পান না। যারা প্রতি রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের মধ্যে বিষণ্নতাসহ ১০টি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেশি, তুলনায় যারা সাত ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমান। ঘুম এবং ডিপ্রেশনের সম্পর্ক দুই দিকেই কাজ করে। ডিপ্রেশন থাকা মানুষদের ঘুমাতে সমস্যা হয়—ঘুম আসতে দেরি হয়, ঘুম ভেঙে যায়, অথবা অনেক বেশি ঘুমায়। প্রায় ৯০ শতাংশ ডিপ্রেশন আক্রান্ত মানুষের ঘুমের সমস্যা থাকে। আবার যারা মাঝারি থেকে গুরুতর অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগের মাত্রা বেশি দেখা যায়। ঘুমের অভা
ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা এবং ঘুমের অভাব—এই দুটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। অনেক সময় এ দুটিকে আলাদা করা কঠিন, তবে কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় কখন আপনার ক্লান্তি শুধু ঘুমের অভাব নয়; বরং আরও গভীর কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সাধারণভাবে আমরা ঘুম কম হলে শরীর ও মন দুটোই ক্লান্ত ও ঝিমঝিম ভাবের শিকার হয়। কিন্তু সত্যিকারের ক্লান্তি আর বিষণ্নতার মধ্যে পার্থক্য করা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention) জানিয়েছে, দেশটিতে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন যথেষ্ট ঘুম পান না। যারা প্রতি রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের মধ্যে বিষণ্নতাসহ ১০টি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেশি, তুলনায় যারা সাত ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমান।
ঘুম এবং ডিপ্রেশনের সম্পর্ক দুই দিকেই কাজ করে। ডিপ্রেশন থাকা মানুষদের ঘুমাতে সমস্যা হয়—ঘুম আসতে দেরি হয়, ঘুম ভেঙে যায়, অথবা অনেক বেশি ঘুমায়।
প্রায় ৯০ শতাংশ ডিপ্রেশন আক্রান্ত মানুষের ঘুমের সমস্যা থাকে। আবার যারা মাঝারি থেকে গুরুতর অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগের মাত্রা বেশি দেখা যায়।
ঘুমের অভাবে অত্যন্ত ক্লান্ত মানুষদের মধ্যে ডিপ্রেশনের মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে, যেমন —মনোযোগ কমে যাওয়া, শক্তি ও উদ্দীপনা কমে যাওয়া ও সহজে বিরক্ত হয়ে যাওয়া।
তবে শুধু এই লক্ষণগুলো থাকলেই ডিপ্রেশন ধরা যায় না।
আপনার শরীর কী বলছে?
একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. অ্যালেক্স ডিমিট্রিউ বলেন, ঘুমের অভাব এবং বিষণ্নতার মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য শরীরের সংকেত বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ঘুম হলো আমাদের মনের অবস্থার প্রথম এবং সবচেয়ে সহজে লক্ষ্যযোগ্য সংকেত। ঘুমের সমস্যা সহজে বোঝা যায়, কারণ এটি স্পষ্ট এবং তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে ভেতরে অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না।’
ঘুমের অভাবের লক্ষণ
ঘুমের অভাবের প্রধান লক্ষণ হলো দিনের বেলা ঘুম আসা। অন্যান্য লক্ষণগুলো হলো—
- খিদে বেড়ে যাওয়া
- সারাদিন ক্লান্তি
- ভুলে যাওয়া বা মাথা ঝাপসা লাগা
- যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া
- মেজাজের পরিবর্তন
অন্যদিকে, ডিপ্রেশনের লক্ষণ
- পছন্দের কাজে আগ্রহ হারানো
- ঘুমের সমস্যা
- মনোযোগ কমে যাওয়া
- শক্তি কমে যাওয়া
- অস্থিরতা
- হতাশা বা দোষবোধ
- আত্মহত্যার চিন্তা
ডিমিট্রিউ বলেন, তিনি প্রায়ই ক্লায়েন্টদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি কাজগুলো করতে ইচ্ছা করেন কিন্তু শক্তি পান না, নাকি আগ্রহই নেই?’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষ সাধারণত বলেন, তারা কোনো কাজেই আগ্রহ পান না, এমনকি আনন্দদায়ক কাজেও। কিন্তু ঘুমের অভাবে ক্লান্ত মানুষ সাধারণত কাজ করতে চায়, শুধু শক্তি নেই।
অর্থাৎ, ডিপ্রেশন আপনার উদ্দীপনা বা আগ্রহ কমিয়ে দেয়, আর ঘুমের অভাব শক্তি কমিয়ে দেয়।
লক্ষণ কখন শুরু হলো, সময়টা গুরুত্বপূর্ণ
ডিমিট্রিউ বলেন, ডিপ্রেশন আর ঘুমের অভাব আলাদা করতে লক্ষণের সময়কাল বোঝা খুব জরুরি।
ডিপ্রেশনে সাধারণত টানা দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় মন খারাপ থাকে বা কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ থাকে না। এটি সাময়িক নয়, কয়েক দিনে কমে যায় না।
তিনি জানান, বেশিরভাগ মানসিক রোগ নির্ণয়ে ৪ থেকে ১৪ দিনের সময়কালকে মানসিক পরিবর্তনের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। লক্ষণ প্রতিদিন একইরকম নাও হতে পারে, তবে বেশিরভাগ দিনের বেশিরভাগ সময়ই লক্ষণ দেখা যায়।
যদি কোনো সমস্যা এক সপ্তাহ ধরে আপনার জীবনমানকে প্রভাবিত করে, ডাক্তার দেখানো উচিত।
চিকিৎসায় পার্থক্য
ঘুমের অভাব প্রথমে ঠিক করা উচিত, ডিপ্রেশন থাকুক বা না থাকুক। কারণ ঘুমের অভাব অনেকটাই ঘরে বসেই ঠিক করা যায়।
সহজ কিছু উপায়
- নিয়মিত সময়ে ঘুমানো
- ঘুমানোর আগে ফোন বা কম্পিউটার কম ব্যবহার করা
- রিলাক্সেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক শান্তি পাওয়া
যদি ঘুম ঠিক করেও মন খারাপ না কমে, তাহলে ডিপ্রেশনের চিকিৎসা প্রয়োজন।
ডিপ্রেশনের চিকিৎসায়
- মানসিক পরামর্শ বা থেরাপি
- ওষুধ
- নিয়মিত ঘুম, ব্যায়াম, অ্যালকোহল কমানো, পুষ্টিকর খাদ্য
এসব সাহায্য করতে পারে।
ঘুম হলো আমাদের শরীর এবং মনের যত্ন নেওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ঘুমের অভাবে ক্লান্তি, খারাপ মেজাজ এবং সহজে বিরক্তি দেখা দিতে পারে।
যদিও শুধু ঘুমের অভাব ডিপ্রেশনের কারণ নয়, গবেষণা দেখায় ঘুমের সমস্যা এবং ডিপ্রেশনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে।
যদি ঘুম বা জীবনযাত্রার পরিবর্তন করেও মন খারাপ না কমে, তাহলে এটি ডিপ্রেশনের ইঙ্গিত হতে পারে। তখন একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা সহায়ক—থেরাপি, ওষুধ, বা দুটোই মিলিয়ে চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে।
সূত্র: হেলথলাইন
What's Your Reaction?