ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা থেকে নাম কেটে ‘মৃত’ ঘোষণা করা সাত ব্যক্তির সঙ্গে চা খেয়ে অনন্য এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বুধবার (১৪ আগস্ট) ওই ‘মৃত’ ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। পরে কৌতুকভরা ভঙ্গিতে বলেন, আমার জীবনে অনেক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে, কিন্তু কখনো ‘মৃত’ মানুষের সঙ্গে চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। এই অনন্য অভিজ্ঞতা উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ।
রাহুল গান্ধী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগে টুইটার) চার মিনিটের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে তিনি ওই সাতজন ভোটারের কাছ থেকে শুনছেন যে কীভাবে নির্বাচন কমিশন তাদের ‘মেরে ফেলেছে’।
এক ‘মৃত’ ভোটার বলেন, তারা বিষয়টি জানতে পারেন কমিশন ৬৫ লাখ বাদ পড়া নামের খসড়া তালিকা প্রকাশ করার পর। কিন্তু আমি বেঁচে আছি ও ঘোষণা করতে এসেছি যে আমি মৃত নই।। ওই ব্যক্তি আরও জানান, তাদের একটি পঞ্চায়েতে অন্তত ৫০ জন আছেন, যাদের নাম তালিকা থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে, অথচ তারা সবাই জীবিত।
আরেকজন জানান, তারা সবাই বিহারের রাঘোপুর এলাকার বাসিন্দা (যেটি আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের আসন)। এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি থাকায় অনেকে এখনো সভায় আসতে পারেননি। এমনকি, ৮৫ বছর বয়সী এক নারী ভোটারকেও ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়েছে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, পুনঃযাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো কেরানির ভুল নয়, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ভোটাধিকার হরণ।
এদিন আদালতে শুনানির জন্য সকাল থেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন ওই ‘মৃত’ ঘোষিত ভোটারদের কয়েকজন। রাহুল গান্ধী তাদের আশ্বাস দেন, তিনি কোনোভাবেই ‘ভোট চুরি’ হতে দেবেন না।
এই ইস্যুতেই বিরোধী জোট আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলন চালাচ্ছে ও ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ প্রক্রিয়া ঘিরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, যা আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, আসাম ও ২০২৭ সালে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের জন্য বড় নজির স্থাপন করতে পারে।
কংগ্রেস পরে ওই সাতজন ‘মৃত’ ভোটারের নাম প্রকাশ করে। তারা হলেন- রামিকবাল রায়, হরেন্দ্র রায়, লালমুনি দেবী, বাচিয়া দেবী, লালওয়াতি দেবী, পুনম কুমারি ও মুননা কুমার। তারা সবাই রাঘোপুরের বাসিন্দা।
রাহুল গান্ধী এর আগেও অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি একযোগে ভোট কারচুপির চেষ্টা করছে। তিনি দাবি করেন, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে গত বছর এমন ঘটনা ঘটেছে ও এবার বিহারেও সেই পরিকল্পনা চলছে।
তবে নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগ নাকচ করে রাহুল গান্ধীকে প্রমাণসহ হলফনামা জমা দিতে বলেছে। কমিশন অভিযোগ করেছে, কংগ্রেস জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
বিজেপি অভিযোগ করেছে, রাহুল গান্ধী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে বদনাম করছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কটাক্ষ করে বলেন, আপনারা একের পর এক নির্বাচন হারছেন। এখন তো নির্বাচন হওয়ার আগেই পরাজয়ের অজুহাত খুঁজছেন।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএএইচ