বুকটা তখন দুরুদুরু করছিল

4 months ago 58

অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

বুকটা আমার তখনও দুরুদুরু করছে। আমি কি দ্রুত হাঁটছি, না আস্তে হাঁটছি তা ঠাহর করতে পারলাম না। সাধারণভাবে হাঁটার গতি নির্দিষ্ট করা আমার জন্য বেশ দুষ্কর হয়ে উঠলো। আমি খুব সাবধানে লোকমান ভাইয়ের বাড়ির দিকে চললাম।

লোকমান ভাইয়ের বাড়ি যেতে গেলে বড় রাস্তা থেকে নেমে, পরে একটা সরু মাটির রাস্তা ধরতে হয়। রাস্তাটাকে এক পেয়ে পথ বলা যায়। পথের দু’ধারে বেশ বড় বড় ঘাস আগাছা জন্মেছে। রাস্তার ওপর দিয়ে ভ্যান-রিকশা বা যাতায়াতের ফলে তিনটে সমান্তরাল আর একটু সরু পথ হয়েছে। যেখানে চলাচলের ফলে ঘাস নেই।

এই সরু তিনটে পথের মাঝখানের পথে আমি হাঁটতে লাগলাম। মিনিট কয়েক হাঁটার পর, পেছন থেকে সাইকেলের বেল দিতে শুনলাম সাইড দেওয়ার জন্য। আমি বাম দিকের পথে সরে সাইড দেবো, না ডানদিকের পথে গিয়ে সাইড দেবো, বুঝতে না পেরে এক জায়গায় একটা খুঁটির মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। সাইকেলটি ফুস্ করে আমার বাঁ দিক দিয়ে আমাকে পার হয়ে চলে গেলো।

এতক্ষণে বুঝলাম, আমি এপথ দিয়ে আগেও এসেছি, অনেকবারই এসেছি। আর আমি সাধারণভাবে হাঁটছি না। আমার উচিত ছিল, সবচেয়ে বাঁ দিকের পথ দিয়ে হাঁটা। সাইকেলওয়ালারা বাঁ দিক দিয়ে পেছন থেকে এলে, বেল বাজিয়ে বাঁয়ের পথ থেকে পথ পরিবর্তন করে মধ্যের পথ দিয়ে যাবে। এটাই নিয়ম।

মনে হলো আমার মাথা পুরোপুরি কাজ করছে না। কোনো ভুলভাল করে না ফেলি। কোনোরকম ভুল করা চলবে না। তাহলে সর্বনাশ হবে। ঈশরাত আপু খুব আশাহত হবে। ভাববে আমি কোনো কাজের না। একদম অকর্মার ঢেঁকী। তাছাড়া আমাকে এ রকম একটা দায়িত্ব জীবনে আর কেউ কখনো দেয়নি। যদি ভুল করি তবে আর কোনো দায়িত্বই হয়তো জীবনে কখনো পাবো না।

তারপর অতি সাধারণভাবে হেঁটে হাজির হলাম লোকমান ভাইদের বাড়ির সামনে। এতদিন এ পথ দিয়ে কতই যে হেঁটেছি, খেলে বেড়িয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। আজ যেন নতুন করে দেখছি বাড়িটা। মনে হচ্ছে বাড়িটা একদম অচেনা। শুকনো কলা পাতা দিয়ে, বাঁশের চটা দিয়ে, বেড়া দেওয়া হয়েছে। রাস্তার থেকে যেন পুরোপুরি দেখা না যায়, তার জন্য। রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটলে বেড়ার ওপারে কি হচ্ছে খুব একটা বোঝা যায় না, দেখা যায় না।

যদি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকে পরখ করা হয়, তবেই দেখা সম্ভব একটু আধটু। আমি বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাবলাম, বাড়ির ভেতরে ঢোকা মনে হয় ঠিক হবে না। বাড়ির ভেতরের উঠানে কাউকেই দেখলাম না। উঠানে শুধু একটা কুকুর শুয়ে বিশ্রাম করছিল বোধ হয়। কুকুরটা আমার গতিবিধি আর ইতস্ততা দেখে মুখ তুললো। আমি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলাম ভয়ে ভয়ে।

কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠলো শোয়া অবস্থাতেই, দাঁড়ালো না। ঘর থেকে লোকমান ভাই বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকালেন। আমাকে দেখতে পাননি মনে হয়। ততক্ষণে কুকুরটা উঠে দাঁড়িয়েছে। আমারও বাড়ির ভেতরে ঢুকতে বেশ ভয় করছিল। এই কুকুরটির ভয়। কুকুর দেখলে আমার খুব ভয় হয়। কুকুরে কামড়ালে একটা ভীষণ তেষ্টার রোগ হয়।

শুনেছি দুই সপ্তাহ ধরে পেটের নাভীর চারপাশ দিয়ে প্রতিদিন মোটা সূচের একটা করে ইঞ্জেকশন দিতে হয়। কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার! তারপর দেখলাম কুকুরটা একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে, আর একবার লোকমান ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। লোকমান ভাই রাস্তার দিকে এলেন।

বললেন,
‘কিরে ভয় পেয়েছিস?’
ভয়ে ভয়ে বললাম,
‘হ্যাঁ, অল্প।’

আমাকে আশ্বস্ত করে লোকমান ভাই বললেন,
‘ভয় নেই রে। আমি সাথে থাকলে টমী তোকে কিছু বলবে না। ওর নাম টমী।’
বলেই টমীর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলেন।

এমআরএম/এমএস

Read Entire Article