দাম কমানোর দাবিতে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-ভুটান থেকে ছয়দিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বুড়িমারী দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য পণ্য নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র পচনশীল পণ্য ছাড়া গত ছয়দিন ধরে অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের প্রায় ৭-৮ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টাও ভারত থেকে কোনো পণ্য বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসেনি। ছয়দিন ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়েছে সরকার।
জানা গেছে, ভারত-ভুটানের ব্যবসায়ীরা পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় প্রতি টন পাথর ১৪ ডলারে বিক্রি করলেও বুড়িমারী স্থলবন্দরে দুই ডলার বাড়িয়ে ১৬ ডলার করা হয়। যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সিএনএফ ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ করেন।
গত ৪ জানুয়ারি ব্যাংকিং সুদ বৃদ্ধি, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাজার মূল্যের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে ভারত-ভুটানের পাথর রপ্তানিকারকদের পাথরের মূল্য পুনঃনির্ধারণে চিঠি দেয় বুড়িমারী আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন।
চিঠির কোনো উত্তর না পেয়ে ১৯ জানুয়ারি বুড়িমারী অ্যাসোসিয়েশন সভা করে। সভায় ব্যবসায়িক ক্ষতি থেকে রক্ষায় ভুটান থেকে স্টোন বোল্ডার তোর্শা প্রতি মেট্রিক টন ১৫ ডলার ও সামসি স্টোন ১৪ ডলারে এবং ভারত থেকে স্টোন বোল্ডার তোর্শা প্রতি মেট্রিক টন ১০ ডলারে রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে পাঠাতে সিদ্ধান্ত জানায় বুড়িমারী আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন। তাদের জবাব না পাওয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সাময়িকভাবে পাথর আমদানি বন্ধ রাখেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানিকারক রাজ ট্রেডিংয়ের সোফিয়া রহমান বলেন, ভারত ও ভুটানের ব্যবসায়ীরা কোনো কারণ ছাড়াই দুই-তিন ডলার দাম বৃদ্ধি করেছে পাথরের। এতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে ফেলছে। তাই আমরা ভারত ও ভুটানের ব্যবসায়ীদের একমাস আগেই পত্র দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি বেশি দামে পাথর আমদানি করবো না। তারা আমাদের চিঠির কোনো উত্তর না দিয়ে পাথরের দাম বৃদ্ধি করে।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইবনে সুমন বলেন, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়ীদের পাথরের দাম নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আমদানি বন্ধ রয়েছে। তারা পাথরের দাম কমার সিদ্ধান্ত নিলেই আমদানি করবো।
এ বিষয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু রাইয়ান আশয়ারী রছি বলেন, ভুটান এবং ভারতের বোল্ডার পাথরের বর্তমান দাম নির্ধারণে সেখানকার রপ্তানিকারকদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া না পাওয়ায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি।
বুড়িমারী স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা রাহাত হোসেন বলেন, আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি অ্যাসোসিয়েশনের। তবে আমাদের অফিস চলমান। আমদানি-রপ্তানি চালু হলে কার্যক্রম শুরু হবে। আমদানি-রপ্তানি না থাকলে রাজস্বে প্রভাব পড়বে।
রবিউল হাসান/জেডএইচ/এএসএম