বুলবুলকে সভাপতি, তামিমকে সহ-সভাপতি করে সমঝোতার চেষ্টা!

2 hours ago 3

অনেক পানি ঘোলা করে হলেও অবশেষে দুদকের ‘অবজারভেশনে’ থাকা ১৫ ক্লাব কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত কাউন্সিলরশিপ পেয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন যে তালিকা ঘোষণা করেছে, তাতে প্রাথমিকভাবে কাউন্সিলরশিপ না পাওয়া ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আগেই জানা দুদকের ‘অবজারভেশন’ আছে, তাই ১৫ ক্লাবকে কাউন্সিলরশিপ না দিয়ে নতুন করে কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা বলেছিল বিসিবি নির্বাচন কমিশন। সেই মোতাবেক গতকাল বৃহস্পতিবার সেই ১৫ ক্লাবের কর্তারা এসে নির্বাচন কমিশনে কাগজপত্র জমা দিয়ে যান। তাদের পক্ষে খোদ তামিম ইকবালও জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত আজ বিসিবি নির্বাচন কমিশন থেকে সেই ১৫ ক্লাব কাউন্সিলরশিপ পেয়েছে। তাতে করে বিসিবির সদ্যবিদায়ী কমিটির পরিচালক ও মিডিয়া এবং আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতিখার রহমান মিঠু (ভাইকিংস) এবং বিসিবির সাবেক পরিচালক লোকমান হোসেন ভুঁইয়াও (নাখালপাড়া ক্রিকেটার্স) কাউন্সিলর হয়েছেন।

যেখানে তামিম ইকবাল বারবার অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার, গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বরও তিনি মিডিয়ায় প্রকাশ্যে বলে গেছেন, ‘আমার হাম্বল রিক্যুয়েস্ট, নোংরামি করেন না। অনেস্ট ওয়েতে ইলেকশন করেন। ফেয়ার ওয়েতে করেন। একটা পক্ষকে দুর্বল করার জন্য এটা করা হচ্ছে। সবাই জানে। ইলেকশন করবেন। ইলেকশনে জিতবেন। ফেয়ার ইলেকশন হবে। যে আসবে, যার কাছে ভোট বেশি পড়বে, সে জিতে নিয়ে চলে যাবে।’

গতকাল (বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর) রাতেও ছিল ‘কী হয়, কী হয়’ অবস্থা; কিন্তু এরপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব দাবি মেনে ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ প্রদান করলো নির্বাচন কমিশন। সন্দেহাতীতভাবেই এটা এবারের বিসিবি নির্বাচনে নতুন খবর।

তবে তারচেয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য আছে। খুব ভেতরের খবর হলো, বিসিবি নির্বাচন নিয়ে সব রকমের উত্তেজনা সম্ভবত প্রশমিত হতে যাচ্ছে। যেভাবে তামিম ইকবাল ও তার পক্ষ নির্বাচনে বিসিবি প্রধান আমিনুল ইসলাম বুলবুল, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও সরকারের প্রশাসনের অযাচিত হস্তক্ষেপ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন এবং ঝাঁঝালো বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তা মনে হয় খানিক প্রশমিত হয়ে যাচ্ছে।

বরং ভেতরে ভেতরে অনেক জল্পনা-কল্পনা আর দ্বিধা-বিভক্তির পর অবশেষে একটা সমঝোতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একাধিক নির্ভারযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপিপন্থি তামিম ইকবাল প্যানেল আর সরকারপক্ষের আমিনুল ইসলাম বুলবুলের প্যানেল এক হয়ে যেতে পারে।

এরই মধ্যে একটা প্যানেল তৈরির প্রস্তাব উঠেছে এবং জানা গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সে প্রস্তাব নিয়ে দু’পক্ষের নীতিনির্ধারক মহলে কথাবার্তা চলছে। সেখানে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সভাপতি আর তামিম ইকবালকে সম্ভাব্য সহ-সভাপতি করার প্রস্তাব উঠেছে।

ভাবছেন, আমিনুল ইসলাম বুলবুলতো ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার আশীর্বাদপুষ্ট এবং তার প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে বুলবুলের ওপর। একইভাবে তামিম ইকবালও তো জাতীয়তাবাদী ঘরানার ক্রিকেট সংগঠকদের পছন্দর প্রার্থী। তাদের মধ্যে তো জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা শোনা যাচ্ছে, তাহলে হঠাৎ আপোষ ও সমঝোতা কেন, কী কারণে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনোরকম ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করে নয়, নির্বাচনী ছকেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, বিসিবি নির্বাচনে ক্যাটাগরি মোট তিনটি। ঢাকার ক্লাগুলোর ৭৬ ভোটার বা কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবেন ১২ জন পরিচালক। বাকি ১৩ পরিচালকের ১০ জন আসবেন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে। দুজন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তথা সরকার মনোনীত। আর একজন সার্ভিসেস, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এবং জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটারদের গড়া ক্যাটাগরি ‘সি’ থেকে।

এখন ঢাকার ক্লাবগুলোর ১২ জন ছাড়া বুলবুলের ১৩ ভোট একরকম নিশ্চিত। সে হিসাবটাও পানির মতো সহজ। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলো থেকে শেষ পর্যন্ত অ্যাডহক কমিটির সদস্যর বাইরে কাউকে কাউন্সিলরশিপ প্রদান করা হয়নি। মানে ৬৪ জেলা আর ৮ বিভাগ থেকে যারা কাউন্সিলর হয়েছেন, তারা নিজ নিজ জেলা ও বিভাগের প্রশাসক তথা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত। আর ক্রীড়া উপদেষ্টা স্বয়ং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চেয়ারম্যান। কাজেই জেলা ও বিভাগ থেকে আসা কাউন্সিলরদের ভোট বুলবুলের পক্ষেই পড়বে। সেদিক থেকে হিসেব করলে জেলা ও বিভাগের কোটার ১০ পরিচালকই বুলবুলের পক্ষের লোক জিতে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

BCB

ধরা হচ্ছিল, ক্লাবের ১২ পরিচালক হবেন তামিম ও তার পক্ষের লোকজনের; কিন্তু তা দিয়েও শেষ রক্ষা হবে না। কারণ, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ১০ পরিচালকের সাথে বুলবুলের পক্ষে আরও তিন পরিচালক নিশ্চিত। তারা হলেন এনএসসির ২ আর ‘সি’ ক্যাটাগরির ১ জন। তাতে করে তামিম যদি ঢাকার ক্লাব কোটার সব ভোটও পান (মানে ১২টি) তারপরও সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ বুলবুলের ১৩ ভোট একরকম নিশ্চিত।

আগে যত হইচই, সোরগোল আর উত্তেজনাই ছড়াক না কেন, এমন যখন অবস্থা- তখন দু’পক্ষের মধ্যেই একটি সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সরকারপক্ষ থেকে তামিম ইকবাল পক্ষের কাছে ১২ পদ থেকে ২ না হয় ৩ পরিচালক চাওয়া হয়েছে এবং তা নিয়েই এখন নাকি কথা চালাচালি হচ্ছে বেশি।

দু’পক্ষের দায়িত্বশীল সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছেন। তার উদ্যোগেই নাকি দু’পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে ফারুক আহমেদ ও মেজর (অব.) ইমরোজকে ঢাকার ক্লাব কোটায় সমঝোতায় জিতিয়ে আনার প্রস্তাব এসেছে।

যদি সেটা হয়, তাহলে বুলবুলের পক্ষ আরও ভারী হবে। সুতরাং এ পরিস্থিতিতে জানা গেছে, বুলবুলকে সভাপতি, তামিমকে সহ-সভাপতি করার প্রস্তাব এসেছে। পাশাপাশি নাজমুল আবেদিন ফাহিম না হয় ফারুক আহমেদের মধ্য থেকে একজনকে অপর সহ-সভাপতি করার প্রস্তাবও নাকি দেওয়া হয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, এখনো দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। তবে সেটা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। তাই যদি হয়, তাহলে বিসিবি নির্বাচন নিয়ে যে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছিল, তা কমবে। হয়তো এক প্যানেলেই হবে নির্বাচন। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত কী হয়!

এআরবি/আইএইচএস

Read Entire Article