বেতন কম হওয়ায় তরুণরা সাংবাদিকতায় আকর্ষণ হারাচ্ছেন: তথ্য উপদেষ্টা

1 month ago 22

দেশে সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব আরও বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার ওয়েজ বোর্ড সংস্কারের চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‌‘ওয়েজ বোর্ড নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। বেতন কাঠামো কম হ‌ওয়ায় তরুণরা সাংবাদিকতার মতো পেশায় আকর্ষণ হারাচ্ছেন। তাই ওয়েজ বোর্ড সংস্কারের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অফিসকক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের বিষয়ে হেলেন লাফেভের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

আলোচনা শুরুতেই হেলেন লাফেভ উপদেষ্টাকে নতুন দায়িত্বগ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে সরকারে এসে দৃষ্টিভঙ্গির কী পরিবর্তন হয়েছে, তা জানতে চান।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে সরকারি এসেছি, তাই দৃষ্টিভঙ্গি একই আছে। শুধু কাজের পদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে। আমরা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করছি।

চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স উপদেষ্টার কাছে তার দুই মন্ত্রণালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, মন্ত্রণালয় দুটির প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কথা ভাবছি। সে অনুযায়ী প্রস্তাবনা তৈরি করে কাজ করা হচ্ছে।

‘সাগর-রুনি হত্যার বিচার নিয়ে প্রহসন’
হেলেন লাফেভ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা; বিশেষ করে সাইবার সিকিউরিটি আইন বিষয় জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। বিগত বছরগুলোতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে নিচের দিকে ছিল। বিগত দিনে বাংলাদেশে সাংবাদিকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি সাংবাদিক সাগর ও রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রহসন হয়েছে। বিগত সরকার বেশ কিছু আইন দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করেছে। বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা আইন। আমরা এ আইন নিয়ে কাজ করছি। মূল কথা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন আমরা রাখবো না।

‘সাংবাদিকরা সংস্কারে এগিলে এলে সমাধান করবো’
ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক কর্মকর্তা স্টিফেন ইবেলিও বৈঠকে অংশ নেন। বাংলাদেশের মিডিয়া হাউজের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে দেখছে, সে বিষয়ে জানতে চান।

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। সাংবাদিকরা যদি এ বিষয়ে সংস্কারের জন্য এগিয়ে আসেন, তাহলে আমরা এ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবো।

পিআইবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ এবং সিটিজেন জার্নালিস্টদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে একসঙ্গে বাংলদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

বৈঠকে অংশ নেওয়ার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সেলর জন ফে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির মেটা, গুগল, মাইক্রোসফট, ওরাকলের বিনিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় স্বার্থরক্ষা করে যেকোনো বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি এ কোম্পানিগুলোর ডাটা সেন্টার ভারতের পরিবর্তে বাংলাদেশে স্থাপনেরও অনুরোধ জানানো হয় প্রতিনিধিদলকে।

সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে পারস্পরিক অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান।

এসময় তিনি দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর ও অনমনীয় অবস্থান সম্পর্কে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে অবহিত করেন।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মুশফিকুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, দূতাবাসের পলিটিক্যাল-ইকোনমিক কাউন্সেলর এরিখ জিলান, মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জেমস গার্ডিনার, প্রটোকল সুপারভাইজার নিশাত তাসনিম প্রমুখ।

এএএইচ/এমআইএইচএস

Read Entire Article