মোটরসাইকেলে দুই ব্যাগভর্তি খাবার। সেগুলো নিয়ে শহরের অলিতে-গলিতে ছুটে চলেছেন এক তরুণ। উদ্দেশ্য রাস্তার কুকুরগুলোকে খাওয়াবেন। মোটরসাইকেলের শব্দ আর রিয়াদের ডাক রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরদের খুব পরিচিত। যেন আত্মার সম্পর্ক। কুকুরগুলো ছুটে আসতেই পলিথিন বিছিয়ে খাবার দিয়ে দেন ওই তরুণ। কুকুরগুলোও মজা করে খায়।
দুই বছর ধরে এভাবেই রাস্তার কুকুরগুলোর ক্ষুধা নিবারণ করছেন রিয়াদ চৌকিদার (২২)। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের পূর্ব রাস্তি এলাকার সেলিম চৌকিদার ও নাসরিন বেগমের ছেলে।
তেমন একটা পড়াশোনা করা হয়নি রিয়াদের। জীবন-জীবিকার তাগিদে একটি মোটরসাইকেলের শোরুমে চাকরি করেন। সারাদিন শোরুমে কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরে পরিবারের সহযোগিতায় কুকুরদের জন্য ভাত ও তরকারি রান্না করেন। বেশিরভাগ সময়ই মুরগির মাংস রান্না করা হয়। মাস শেষে বেতনের প্রায় সব টাকায় ব্যয় করেন কুকুরদের খাবারের জন্য। তার এ পশুপ্রেম দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসীও।
মাদারীপুর শহরের আমিরাবাদ, বাদামতলা, কলেজ রোড, মিলন সিনেমা হল, পুরান বাজার, ১ নম্বর শকুনি, চৌরাস্তা, রেন্ডিতলা, লঞ্চঘাট, কোটের মোড়, দরগাখোলা, বটতলা, মস্তফাপুরসহ প্রতিদিন ১০-১২টি স্থানে কুকুরদের খাবার দেন রিয়াদ। খাবারগুলো মাটিতে দিলে নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য পলিথিন বিছিয়ে দেন। রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত খাবারগুলো দেওয়া হয়।
দুটি ব্যাগে করে মোটরসাইকেল নিয়ে খাবার দিতে বের হয়ে যান রিয়াদ। নির্দিষ্ট জায়গায় গেলে মোটরসাইকেলের শব্দ আর রিয়াদের ডাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কুকুরগুলো ছুটে আসে। খাবার দেওয়ার সময় কুকুরের মাথায় পরম যত্নে হাতও বুলিয়ে দেন এই তরুণ। এখানেই শেষ নয়। কোনো কুকুর অসুস্থ হলে সেবা দিতেও বাদ যান না এই তরুণ।
মাদারীপুর শহরের ১ নম্বর শকুনি এলাকার বাসিন্দা রোমান তালুকদার, রাতুল তালুকদার, সাহানা বেগম ও রুমা আক্তার বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই রিয়াদ আমাদের এলাকায় কুকুরদের খাবার দিচ্ছে। কুকুরের প্রতি তার এই ভালোবাসা প্রশংসা পাওয়ারযোগ্য।’
পুরানবাজার এলাকার ইসমাইল খান বলেন, ‘পশুদের প্রতি রিয়াদের ভালোবাসা বিরল। তাকে দেখে অন্যরাও পশুদের ভালোবাসায় উৎসাহ পাবেন।’
কথা হয় পশুপ্রেমী রিয়াদ চৌকিদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় দুই বছর ধরে কুকুরদের খাওয়াচ্ছি। কুকুর দেখলেই সবাই তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমার কাছে ওদের খুব ভালো লাগে। আমি ওদের খেতে দিয়ে আনন্দ পাই। তাই বেতনের প্রায় সব টাকা এই কুকুরদের জন্য ব্যয় করি। এতে আমি খুশি।’
মাদারীপুরের স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের সদস্য জাহিদ হাসান খান বলেন, ‘রাস্তায় বেড়ে ওঠা কুকুরগুলো সবসময়ই অবহেলিত। কেউ ওদের খাবার দেওয়াতো দূরের কথা, কাছে গেলেই তাড়িয়ে দেয়। তাই রিয়াদের এই কাজকে সাধুবাদ জানাই।’
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দিবস রঞ্জন বাগচী বলেন, রিয়াদের এই মহতী উদ্যোগে স্বাগত জানাই। আসলে আমাদের এই ব্যাপারে কোনো বরাদ্দ নেই। তবে তাকে টেকনিক্যাল সহযোগিতা করা যাবে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসআর/এএসএম