বেপরোয়া পুকুর খননে সিরাজগঞ্জে কমছে ফসলি জমি
সিরাজগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ পুকুর খনন চক্র। রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে কৃষকের জমি নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ। ফলে জেলার উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় উজাড় হচ্ছে তিন ফসলি উর্বর জমি। এরই মধ্যে এই তিন উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে। পাশাপাশি কৃষিজমিতে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। মাটিখেকোদের এই অপকর্মে দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জে কমছে ফসল ও সবজি উৎপাদন। এমনকি উঁচু ভিটা কেটেও চলছে পুকুর খনন। দীর্ঘ দেড় দশক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুকুর খনন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন পুকুর খনন সিন্ডিকেট দখলে নিয়েছেন বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কৃষিজমি রক্ষায় আইন এবং সরকারি বিধিবিধান থাকলেও প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় বন্ধ হচ্ছে না এসব পুকুর খনন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই অবাধে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ। উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের চয়ড়া গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, তার মোট পাঁচ বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। কিন্তু তার গ্রামে অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে তার দুই বিঘা
সিরাজগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ পুকুর খনন চক্র। রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে কৃষকের জমি নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ। ফলে জেলার উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় উজাড় হচ্ছে তিন ফসলি উর্বর জমি। এরই মধ্যে এই তিন উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে। পাশাপাশি কৃষিজমিতে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
মাটিখেকোদের এই অপকর্মে দেশের শস্যভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জে কমছে ফসল ও সবজি উৎপাদন। এমনকি উঁচু ভিটা কেটেও চলছে পুকুর খনন।
দীর্ঘ দেড় দশক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুকুর খনন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন পুকুর খনন সিন্ডিকেট দখলে নিয়েছেন বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কৃষিজমি রক্ষায় আইন এবং সরকারি বিধিবিধান থাকলেও প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় বন্ধ হচ্ছে না এসব পুকুর খনন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই অবাধে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ।
উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের চয়ড়া গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, তার মোট পাঁচ বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। কিন্তু তার গ্রামে অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে তার দুই বিঘা জমিতে এখন আর কোনো চাষাবাদ করা যায় না। বছর জুড়েই থাকে জলাবদ্ধতা।
একই গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, তার ১১ বিঘা জমি থাকলেও তিনি জলাবদ্ধতার কারণে ফসল ফলাতে পারেন না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২২ সালে এলাকার কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি প্রায় ১০০ একর ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে। ওই সময় তাদের জমিও চেয়েছিল কিন্তু তারা দেননি। এতে তাদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। গভীর নলকূপের মাধ্যমে ওঠানো পানি ছেড়ে দেয় পুকুরের মালিকরা। আর এতেই জমিগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কোন কৃষক প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সুমি এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত পুকুর খননে সাধারণ কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে ওইসব পুকুরের মালিকদের বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও পুকুরের পানি ফসলি জমিতে ছেড়ে দেন। আর এতেই ফসলি জমিতে পানি বাঁধে।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম আরিফ বলেন, কৃষকদের ফসলি জমি অনাবাদি হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ঘুরে দেখেছি। সেটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পুকুর খনন রোধে নজরদারি বাড়ানো হবে।
রায়গঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, খাদ্য উৎপাদনে ফসলি জমির বিকল্প কিছু নেই। আমরা অবৈধ পুকুর খনন ও ফসলি জমির টপসয়েল কাটা রোধে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, কৃষিজমিতে পুকুর খনন বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কৃষিজমির শ্রেণি বদল করে পুকুর খনন পুরোপুরি বেআইনি। কিন্তু সুযোগ সন্ধানীরা অত্যন্ত কৌশলী। তারা আইন অমান্য করেই পুকুর খনন করছে। ফলে কৃষিজমি কমছে। কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এফএ/এএসএম
What's Your Reaction?