বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা কেন নয়

5 hours ago 4

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও মুবিনা আশরাফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেছেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার চৌধুরী মোর্শেদ কামাল টিপু। তাকে সহযোগিতা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার)। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শফিকুর রহমান। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহফুজ বিন ইউসুফ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট একরামুল কবির ও অ্যাডভোকেট মো. ঈসা।

বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে ও তাকে বরখাস্ত করতে ব্যারিস্টার সোলায়মান গত ১০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবীর পক্ষে রিট করেন।

রিট বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেবিচক চেয়ারম্যান, পরিচালক (প্রশাসন) ও প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে বিবাদী করা হয়। শুনানি শেষে আজ রুল জারি করেন আদালত।

এর আগে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৬ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রিট দায়ের করা হয়।

রিটকারীরা হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার), ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার, অ্যাডভোকেট মো. শাহেদ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট খায়রুল বাশার।

লিগ্যাল নোটিশে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে তাৎক্ষণিকভাবে তার পদ থেকে সরাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। অন্যথায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

নোটিশে বলা হয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের অনুসন্ধানে এই লুটপাটের সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নয়নের নামে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে দুদক।

নোটিশে আরও বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলীর মতো পদে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তদন্ত কাজ ব্যাহত হবে। তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করতে পারেন বা সরিয়ে ফেলতে পারেন। তাই তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটা জরুরি। তিনি পদে থাকলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকাটা স্বাভাবিক।

এতে বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও একাধিক অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঘুসের টাকা ফেরত চেয়ে তার বিরুদ্ধে জিডি দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী। তারপরও আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বেবিচকের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় এরই মধ্যে আসামি হয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আওতাধীন দেশের বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। ইতোমধ্যে থার্ড টার্মিনালসহ দেশের আটটি বিমানবন্দরে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সোলায়মান (তুষার) বলেন, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একাধিক দুর্নীতির মামলা হয়েছে। তিনি তার পদে বহাল থাকলে মামলার তদন্তকাজ প্রভাবিত করতে পারেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে তার পদ থেকে সরানোটা জরুরি।

তিনি বলেন, ঘুসের টাকা ফেরত চেয়ে তার বিরুদ্ধে জিডি করা হয়েছে। তিনি পদে থাকলে সঠিকভাবে তদন্ত হবে না, দুদকও এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

এফএইচ/এমকেআর/জিকেএস

Read Entire Article