বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কেন চাকরি করবেন

2 months ago 28

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি। আমাদের দেশে আরও একটি বড় সামাজিক সমস্যা হলো পরিবারের একজনের আয়ের ওপর নির্ভর করে পুরো ফ্যামিলি। জনশুমারি ২০২২ এর তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট কর্মক্ষম মানুষ আছে ৬৫.৫১%। এই জনসংখ্যা আমাদের দেশের শক্তিতে রূপান্তর হতে পারত। কিন্তু তা না হয়ে মানুষকে দিন দিন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলছে। এই হতাশা তরুণ থেকে মধ্যবয়সী সবার মধ্যে।

সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর কয়েক লাখ ছাত্র-ছাত্রী পাস করে বের হন। কিন্তু এত শিক্ষার্থীর জন্য সরকারি চাকরির সুযোগ নেই এটিই বাস্তবতা। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরির বাজারে চাকরির সুযোগ অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এখানে পড়াশোনার মূল লক্ষ্যই হলো কর্মসংস্থান। একাডেমিক পড়াশোনা শেষে চাকরি প্রার্থীদের সামনে দুই ধরনের চাকরির পথ খোলা থাকে। তন্মধ্যে একটি সরকারি চাকরি, অন্যটি হলো বেসরকারি চাকরি।

দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বেসরকারি খাত। এককভাবে পোশাক খাতেই রয়েছেন বিভিন্ন পদে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি চাকরিজীবী। বেসরকারি খাত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও এ খাতের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পদের চাকরিগুলো করায়ত্ত করে রেখেছেন বিদেশিরা। যথাযথ দক্ষ কর্মীর অভাবেই বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট ও মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশিদের নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছে।

যখন ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসে, তখন অনেকেই নানা ধরনের দ্বিধায় ভুগতে থাকেন। চাকরির জীবন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় এবং সুযোগ-সুবিধাগুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর না রাখার কারণেও অনেকে পিছিয়ে পড়েন। চাকরিপ্রার্থীরা তাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেন। এক্ষেত্রে দ্বিধায় না ভুগে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে যদিও সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার হার বেশি, এর পেছনে নানা কারণও বিদ্যমান। একে তো আমাদের বেহাল শিক্ষাব্যবস্থা, অন্যদিকে আমাদের সামগ্রিক প্রস্তুতিতে অবহেলা। সবাই ধরে নেয়, চাকরিতে গিয়ে শিখবে? তাহলে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কী দরকার। অফিসগুলো কোচিং সেন্টার খুলে শিখিয়ে নিতে পারে। চাকরির বাজারে তারাই ভালো করে, যারা কিছু সফট স্কিল আগে থেকে শিখে আসে। তরুণের সব থেকে বড় সমস্যা হলো তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই, লক্ষ্য নেই, তারা নিজেদের গন্তব্য জানে না। চাকরির জন্য কোনো উপযুক্ত শিক্ষা নেই। তাই নিজের কিছু না থাকলে বেসরকারি চাকরিতে টিকে থাকা কঠিন।

বেসরকারি চাকরি ও সুযোগ-সুবিধা

বাংলাদেশে বেসরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া খুবই দ্রুতগতির হয়ে থাকে। পড়াশোনা নামক জীবনযুদ্ধ শেষ করে খুব কম সময়ের মধ্যেই বেসরকারি চাকরি পাওয়া যায়। এখানে স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিয়োগ সম্পন্ন হয় এবং এই সেক্টরে বছরের বেশিরভাগ সময়ই নতুন নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, এখানে সব সময়ই ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বেশি। আর তাই পড়াশোনা শেষ করার পরপরই এই চাকরিতে প্রবেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

চাকরির বাজারে বেতন একটা বড় বিবেচ্য বিষয় হিসেবে কাজ করে। বেসরকারি চাকরিতে বিভিন্ন কোম্পানিতে শুরুর দিকে তেমন উচ্চ বেতন প্রাপ্তির সম্ভাবনা না থাকলেও অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক উচ্চ বেতনের সম্ভাবনা থাকে যেটা সরকারি চাকরিতে পাওয়া সম্ভব হয় না। এদিকে বেসরকারি করপোরেট চাকরির ঝলমলে জীবন-পদ্ধতি সহজেই যে কোনো তরুণকে আকর্ষণ করতে সক্ষম।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির কর্মপরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই তরুণদের আকৃষ্ট করে থাকে। এখানে কাজের জন্য থাকে চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ। সবকিছুই স্মার্ট আর আকর্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রেই কাজের সুবিধার্থে কর্মীদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু সরকারি চাকরিতে অনেক সময়ই কাজ করার পরিবেশের ব্যাপারে কিছুটা হলেও আপোষ করে নিতে হয়, যা পুরোপুরি আপনার উপর নির্ভর করে।

চাকরির পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় নিয়ামক হয়ে কাজ করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বিষয়ক ভাবনা। বাংলাদেশে ৩০ বছর পর্যন্ত একজন তরুণ সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু বেসরকারি চাকরির জন্য এই বয়সটা মোটেও উপযুক্ত নয়। বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই ক্ষেত্রে সদ্য স্নাতক শেষ করা তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। আর তাই পাস করার পরই তরুণদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন চাকরি করবেন, সরকারি নাকি বেসরকারি?

যারা মফস্বল থেকে ঢাকায় পড়াশোনার জন্য আসেন, তাদের মধ্যে কেউ কেই ঢাকা ছাড়তে চান না। আবার অনেকেই ঢাকা ছাড়তে পারলেই হাফ ছেড়ে বাঁচেন। আর তাই চাকরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকায় অবস্থান কিংবা বাইরে যাবার প্রশ্নটি উঠে আসে। সরকারি চাকরিতে বেশিরভাগ সময়ই প্রথম দিকে ঢাকার বাইরে কর্মস্থল থাকে। এমনকি কিছু চাকরিতে সারা জীবনই ঢাকার বাইরে কাটাতে হয়। অন্যদিকে বেশির ভাগ করপোরেট এবং প্রাইভেট চাকরি ঢাকা কেন্দ্রিক।

এমআইএইচ

Read Entire Article