বেসরকারি শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলিতে বাধা নেই

3 months ago 47

স্বাভাবিক বদলি নয়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

বুধবার (৫ জুন) সচিবালয়ে আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে সম্পন্নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির পথ করে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে এসেছে-এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এনটিআরসিএ’র যে প্রক্রিয়া সেটি নিয়ে উচ্চ আদালত থেকে সুনির্দিষ্ট একটি রায় দেওয়া হয়েছে। রায়ের আলোকে সফটওয়্যার নির্মাণ করা হয়েছে, সেভাবে শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। মৌলিক আইনি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন। তারা কিন্তু সরকার পরিচালিত বা সরকার থেকে নিয়োগকৃত শিক্ষক নন। প্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএ সুপারিশ করে, সেই সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ দেয়, সরকার কিন্তু নিয়োগদাতা নয়। যিনি নিয়োগদাতা নন, তিনি কীভাবে একজন শিক্ষককে বদলি করতে পারেন? সরকার যেহেতু নিয়োগ দিচ্ছে না, তাই সরকারের পক্ষে বদলি করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং।

প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে পারস্পরিক বদলি। সরকার যদি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকতো বা শিক্ষকরা যদি সরকার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন তাহলে বদলিটা সরকার করতে পারত।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বদলির আলোচনাটায় কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। যখন একজন শিক্ষক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আমি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবো। এরপর তিনি বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি তার বাড়ি থেকে অনেক দূরে। তাহলে তিনি কেন সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন? তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি সেটই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন। এখন যদি আমরা বলি যে নিরূপায় হয়ে নিয়েছি। সেটি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে সরকারের পক্ষে, এনটিআরসিএ’র পক্ষে কতটুকু করা সম্ভব সেটি আমাদের একটু ভেবে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সব পর্যায়ে বদলির বিষয়টি কতটুকু করা যাবে সেটি আমাদের কাঠামোগত সংস্কার না হলে সেটি সম্ভব না। প্রান্তিক পর্যায়েও আমাদের কিন্তু মৌলিক বিষয়ের শিক্ষক থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে। এখন সব শিক্ষক যদি শহরমুখী হয়ে যায় তাহলে কিন্তু গ্রাম পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে কিন্তু মৌলিক বিষয়ের শিক্ষক পাব না। শিক্ষক হিসেবে যাদের জন্য এটা অর্থবহ হচ্ছে না, ঠিকানা হয়ত পঞ্চগড় কিন্তু সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বরগুনায়। তার যদি যদি এটি অর্থবহ না হয়, তারপক্ষে এটি ছেড়ে দিয়ে নতুন একটি জায়গায় সেটি যাতে করে পুনরায় আসতে পারেন, আমাদের পক্ষ থেকে সেই বাধা নেই।

যেহেতু আদালতের রায় আছে, সেটি মেনেই সুপারিশ ও নিয়োগ করতে হচ্ছে। পারস্পরিক বদলিতে সমস্যা নেই, পারস্পরিক বদলি হলে শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু শিক্ষক যদি না থাকেন, বদলি হয়ে যদি চলে যান, সেখানকার শিক্ষার্থীদের কারা পড়াবে, সেটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে বলেন মন্ত্রী।

এইচএসসির পরীক্ষা পদ্ধতি পুনর্বিন্যাস হবে

এইচএসসির বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতি ও বিভাগগুলোর পুনর্বিন্যাস করতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসি পর্যায়ে লক্ষ্য হলো সার্বজনীনতা। এসএসসি পর্যায়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী যাতে করে মাধ্যমিকের ধাপ অতিক্রম করতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য মাধ্যমিকের শিখন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার লক্ষ্য সার্বজনীনতা। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মূল্যায়নের যে প্রক্রিয়া হবে সেটির লক্ষ্য হবে সুনির্দিষ্ট, বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষার পথে ধাবিত করা। উচ্চশিক্ষার জন্য যথাযথভাবে তাদের প্রস্তুত করে দেওয়া। এজন্য বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

তিনি বলেন, এসএসসিতে দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের ধাপ উত্তোরণ হবে কিন্তু সনদায়ন হবে না। পুনরায় পরীক্ষা নিয়ে ওই বিষয়ে কৃতকার্য হলে সনদ অর্জন করবে। অর্থাৎ শিখন ফল ঘাটতি মেটালে সনদায়ন হবে। কেউ সনদ নিতে না চাইলে মার্কশিট পাবেন, পূর্ণ সনদায়ন হবে না। কাজে যোগদান করার জন্য সব বিষয়ে কৃতকার্য হতে হবে এমন কথা নেই।

এসএসসি সার্বজনীনতা এবং এইচএসসি পর্যায়ে বিশেষায়িত প্রক্রিয়া-এ দুটি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করার জন্য এরই মধ্যে আমরা এনসিটিবিকে বলে দিয়েছি, সেই লক্ষ্যে শিগগির কাজ শুরু হবে।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে আনাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্বাইন্ড ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেটি কার্যকর আছে। তবে একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিন্তু সুনির্দিষ্ট আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। সেজন্য তাদের সম্মতির ভিত্তিতে কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় আসতে পারি। সেক্ষেত্রে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা যদি অংশগ্রহ করতে না চায়, সেক্ষেত্রে কিন্তু সবাইকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে আনাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য চয়েজের জায়গাটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তারা যাতে আলাদা আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন। একবারে পরীক্ষা হলে অন্য পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আর থাকে না। এই ফেক্সিবিলিটিটা আমরা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি।

সব কিছু একজোট করে ফেললেই যে সমস্যার সমাধন হবে তা কিন্তু নয়, অন্য সমস্যাও সেখানে সৃষ্টি হতে পারে। তাই সম্মতির ভিত্তিতে, অংশগ্রহণমূলকভাবে যাতে গুচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে অংশগ্রহণ করা যায়। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানে সেখানে অংশ নিতে সম্মত হবেন না, তাদের যে একাডেমিক ডিসিশন, সেটাকেও তো আমাদের সম্মান করতে হবে’ বলেন মহিবুল হাসান চৌধুরী।

আরএমএম/এমআইএইচএস/জিকেএস

Read Entire Article