গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী দেশ বাংলাদেশ। গেল ১৮ নভেম্বর রিও ডি জেনেরিওতে ব্রাজিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে এ জোটের সূচনা হয়। উদ্বোধনী সদস্য হিসেবে জোটটির মর্যাদাপূর্ণ বোর্ড অব চ্যাম্পিয়ন্সের অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৫ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জি-২০ সোশ্যাল সামিটে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে একটি অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও ভাষণে তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ভিডিও বার্তায় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বৈশ্বিক অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে তার ‘ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস’র দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করেন। আর্থিক সহায়তা ও স্কুলের খাবার কর্মসূচির মতো প্রমাণিত কৌশলগুলোর ওপর আস্থাশীল জোটটি বিশ্বব্যাপী অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই জোটে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূমিকা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে তার জোরালো কূটনীতি ও অটল অঙ্গীকারের প্রমাণ। দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিওসহ ১৪৮ সদস্যের এই যুগান্তকারী জোট ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে একত্রিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জি-২০ সভাপতি রাষ্ট্র ব্রাজিল এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশকেই নারী ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এ ছাড়াও ব্রাজিল প্রভাবশালী জি-২০ ফোরামের অধীনে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে টাস্কফোর্সে যোগদান করার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়। জি-২০ কাঠামোর অধীনে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে এ টাস্কফোর্সে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি বৈষম্য হ্রাস ও টেকসই অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে বৈশ্বিক কৌশল গঠনে দেশটির ভূমিকাকে আরও জোরালো করে তোলে। বোর্ড অব চ্যাম্পিয়নসের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যে এ বৈশ্বিক জোটের রূপান্তরমূলক লক্ষ্যগুলোর নেতৃত্ব ও বাস্তবায়নের জন্য একটি কৌশলগত প্ল্যাটফরম অর্জন করেছে।
ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাস এই প্রক্রিয়ায় ও জি-২০ কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্জনের স্বীকৃতি নিশ্চিত করে, দক্ষিণ আমেরিকায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে উন্নীত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে এই বৈশ্বিক জোটের গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও সংকটময় বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় তার অবিচল প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এ বৈশ্বিক জোটের নেতৃত্বে টেকসই সমাধান ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ কার্যকর বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
এর আগে, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ ২০২৪ সালের ১১-১২ অক্টোবর ব্রাসিলিয়াতে নারী ক্ষমতায়ন বিষয়ক জি-২০ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার অংশগ্রহণ লিঙ্গ সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
এদিকে বাংলাদেশ এবং বেলজিয়ামের মধ্যে দ্বিতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরামর্শে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপাক্ষিক-পূর্ব ও পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত ড. মো. নজরুল ইসলাম, আর বেলজিয়ামের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দ্বিপাক্ষিক বিষয়ক) মি. জেরোন কোরম্যান। বেলজিয়ামের অনাবাসী রাষ্ট্রদূত এইচইমি দিদিয়ার ভ্যান্ডারহ্যাসেল্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও পরামর্শে যোগ দেন।
এ সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় উঠে আসে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, অর্থনীতিকে পুনরায় ট্র্যাকে আনা এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগত সংস্কার। বাংলাদেশ ২০২৯ সালের পরও জিএসপি+ এর জন্য এবং ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি স্নাতকোত্তর প্রেক্ষাপটে রূপান্তরিত দেশগুলোর জন্য অতিরিক্ত ৬ (ছয়) বছরের আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থার (আইএসপি) জন্য ইইউর মাধ্যমে বেলজিয়ামের সমর্থন চেয়েছে। বেলজিয়াম এ বিষয়ে যথাযথ বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছে যে, বেলজিয়ান ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যময় আগ্রহ রয়েছে। এ সময় মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি, জলবায়ু পরিবর্তনের অস্তিত্বের হুমকি টেকসই উপায়ে মোকাবিলা করার সময় ক্ষতি এবং ক্ষতি তহবিল দায়িত্ব বাস্তবায়নের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।