ভাটির জেলা সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের কৃষকরা বরাবরই ব্যাংকবিমুখ। হয়রানি ও অধিক নিয়মকানুনের দোহাই দিয়ে ব্যাংকের সরকারি সহায়তা না নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে অর্থের জন্য ছোটেন মহাজনের কাছে। এতে একদিকে যেমন ব্যাংক তার মুনাফা হারাচ্ছে অন্যদিকে উৎপাদিত ধানের লাভের অংশ মহানজনকে পরিশোধ করতে গিয়ে ভাগ্য আর বদলাচ্ছে না কৃষকের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জে তিন দফা বন্যায় নাকাল অবস্থা হয় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের। আউশ ধান থেকে শুরু করে বসতভিটার সব আসবাবপত্র ভেসে যায় পানির স্রোতে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের জীবনমান। টাকার অভাবে ব্যাংকে গিয়ে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হলেও ঋণ পাচ্ছেন না কৃষকরা। তাই মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে বোরো ধান রোপণ করছেন তারা। এতে উৎপাদিত ধানের লাভের বড় অংশ মহাজনকে দেওয়ায় জীবন মানের উন্নতি হচ্ছে না প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের।
বিশেষ করে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজারসহ মোট ১২টি উপজেলার ছোট বড় ১৩৭টি হাওরে প্রায় ১০ লাখ কৃষকের বোরো ধানের চাষাবাদ পুরোদমে শুরু করার কথা থাকলেও এখনো টাকার অভাবে চাষাবাদ শুরু করতে পারেননি অনেকে৷ অথচ সরকারি পর্যায়ে ব্যাংকগুলোতে ঋণ সহায়তাসহ নানা প্রণোদনা প্যাকেজ রয়েছে কৃষকদের জন্য। কিন্তু অতিরিক্ত হয়রানি ও অধিক পরিমাণের নিয়মকানুন থাকায় ব্যাংকের সরকারি সহায়তার ঋণ না নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে অর্থের জন্য কৃষকরা ছুটছেন মহাজনের দুয়ারে।
কৃষক জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, অনেক কষ্ট করে ফসল করে ফসলের লাভের বড় অংশ ঋণ পরিশোধে চলে যায়। যার কারণে হাওরের কৃষকরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হতে পারছেন না। আর কৃষি ঋণের জন্য ব্যাংকে গেলে আমাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।
হাওরের কৃষক মনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, বোরো ধান চাষাবাদ করার জন্য যে টাকার প্রয়োজন সেটা ব্যাংক থেকে নিতে গেলে কৃষকদের হয়রানি হতে হয়। তাই মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে বোরে চাষাবাদ করে পরে লাভের বড় অংশ মহাজনকে দিতে হয়।
সুনামগঞ্জ কৃষি ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছর কৃষকদের ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এরইমধ্যে ৭ হাজার কৃষককে ৪২ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। বাকি টাকাও পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ কৃষি ব্যাংকের মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান শহীদ জাগো নিউজকে বলেন, কৃষি ব্যাংক সহজ শর্তে কৃষকদের ঋণ প্রদান করে। সুতরাং কৃষিঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কৃষকের হয়রানির শিকার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর ১০ লাখ কৃষক দুই লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এখান থেকে ৯ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে। যার বাজার মূল্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
তবে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জাগো নিউজকে বলেন, কৃষকরা যাতে হয়রানিমুক্ত হয়ে কৃষিঋণ পেতে পারেন সেজন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে সভা, সেমিনার করে তাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
এফএ/এএসএম