ব্যাংকের সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন
বর্তমানে ব্যাংকিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চাকরি হোক বা ব্যবসা—অর্থ জমা রাখা, লেনদেন করা, বা ঋণ নেওয়ার জন্য আমরা প্রায় সবাই ব্যাংকের সাহায্য নিই। তবে অনেক সময় দেখা যায়, আমরা ব্যাংকের সুদের হার বা বিভিন্ন চার্জ সম্পর্কে ভালোভাবে জানি না, যার ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হই।
তাই আজকে চলুন জেনে নিই—কেন সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি, আর কীভাবে সচেতন হওয়া যায়।
সুদের হার কী এবং কেন জানা দরকার?
সুদের হার হচ্ছে, আপনি ব্যাংকে টাকা জমা দিলে যে লাভ পাবেন, অথবা ঋণ নিলে যে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে—তা।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার একরকম নয়। কিছু ব্যাংক সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৩% সুদ দেয়, আবার কোনো ব্যাংক ৫% পর্যন্ত দেয়। তেমনি, ঋণের ক্ষেত্রেও কারো ক্ষেত্রে ৯% সুদ, আবার কারো ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে ১২% বা তার বেশি।
আরও পড়ুন : মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতন হোন
তাই সুদের হার জেনে তবেই সিদ্ধান্ত নিন। আপনি যদি বেশি সুদ দেয় এমন সেভিংস স্কিম খুঁজে পান, তাহলে আপনার সঞ্চয় আরও লাভজনক হতে পারে।
চার্জ ও ফি: যেগুলো আমরা এড়িয়ে যাই
অনেক সময় আমরা শুধু অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলি, কিন্তু জানি না এর সঙ্গে যুক্ত আছে বিভিন্ন ধরনের চার্জ:
- SMS Alert চার্জ
- ATM কার্ড রিনিউ ফি
- স্টেটমেন্ট ফি (হাতে বা ইমেইলে নিলে)
- নিম্ন ব্যালেন্স চার্জ
- চেকবই ফি
- ঋণের প্রসেসিং ফি, দেরি হলে পেনাল্টি চার্জ ইত্যাদি
আরও পড়ুন : বুঝে ব্যবহার করুন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড
এই চার্জগুলো ছোট ছোট হলেও, বছরে গড়ে কয়েক হাজার টাকা কেটে নিতে পারে! অ্যাকাউন্ট খোলার আগে ব্যাংকের কাছে চার্জ লিস্ট জেনে নিন। প্রয়োজন না থাকলে কিছু সার্ভিস না নেওয়াই ভালো।
কীভাবে সচেতন থাকবেন?
সুদ ও চার্জ লিস্ট জিজ্ঞাসা করুন: নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ব্যাংকের ব্রাঞ্চ বা অফিসারদের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে নিন। লিফলেট বা ওয়েবসাইট থেকেও জানা যায়।
অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করুন: নিজের অ্যাকাউন্টে কী হচ্ছে, কোন চার্জ কাটা হচ্ছে—সবকিছু আপনি সহজেই দেখতে পারবেন।
অপ্রয়োজনীয় সার্ভিস বন্ধ রাখুন: যেমন SMS alert বা ডুয়াল কারেন্সি কার্ড—যদি আপনার দরকার না হয়, তাহলে বন্ধ করে দিন।
অন্য ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করুন: বিভিন্ন ব্যাংকের অফার যাচাই করে তবেই কোনটায় অ্যাকাউন্ট রাখবেন বা ঋণ নেবেন সেটা ঠিক করুন।
সচেতনতা মানেই সঞ্চয়
বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাত অনেক এগিয়েছে। তবে নিজের টাকা নিয়ে দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। একটু সচেতন হলে আপনি অনায়াসে:
- বেশি সুদ পেতে পারেন
- অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে পারেন
- আর্থিক দিক থেকে আরও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আরও পড়ুন : নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ব্যাংক নির্বাচন করবেন যেভাবে
ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ, তবে চোখ-কান খোলা রাখা আরও নিরাপদ। আপনার কষ্টার্জিত অর্থ যেন অহেতুক চার্জ বা কম সুদের কারণে নষ্ট না হয়, সেটাই সবচেয়ে বড় ব্যাংকিং টিপস।
স্মার্ট হোন, সচেতন হোন—নিজের টাকাকে সম্মান দিন।