ভবঘুরে কল্পনার ঠাঁই হলো সমাজসেবার আশ্রমে

3 months ago 67

ঠিকানাহীন নারী কল্পনা। শুধু নিজের নাম বলতে পারলেও তার কোনো স্বজন ও পরিচিত কারো নাম—ঠিকানার কথা স্মরণ করতে পারছেন না ৫৫ বছর বয়সী এ বৃদ্ধা। এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে তিনি তার খুপরী ঘরের পাশেই স্তুপ করে রাখেন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে তাকে আশ্রমে স্থানান্তর করা হয়েছে।

জানা যায়, প্রায় দেড় বছর ধরে তিনি গাজীপুর শহরের রানী বিলাসমনি সরকারি স্কুলের পুকুর পাড়ে ময়লা স্তুপের পাশে বস্তা ও পুরানো পলিথিনে ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন।

গাজীপুর সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ারুল করিম জানান, সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টিতে ওই বৃদ্ধা সেখানেই অবস্থান করছিলেন। এমন তথ্য জানতে পেরে তার খোঁজ নেন তিনি। পরে বিষয়টি গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামকে জানান। জেলা প্রশাসক মঙ্গলবার (২৮ মে) সহকারী কমিশনার ওয়াহিদা শাবাবকে পাঠালে তিনি কল্পনাকে ভবঘুরে হিসেবে শনাক্ত করেন।

ভবঘুরে কল্পনার ঠাঁই হলো সমাজসেবার আশ্রমে

পরে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন ও সমাজ সেবা কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে খুপড়ি ঘর থেকে চিকিৎসার কথা বলে গাজীপুর শহর সমাজ সেবা অফিসার আবু বকর মজুমদারের তত্ববধানে গাড়িতে গাজীপুরের পূবাইলের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। এ কেন্দ্রে তার মতো প্রায় ৩৫০ জন আশ্রয়হীন ও ভবঘুরে মানুষ বসবাস করছেন।

গাজীপুরের সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবু বকর মজুমদার জাগো নিউজকে জানান, কল্পনা শুধু নিজের নামটি বলতে পারেন, আর কারো কথা তার মনে নেই। তার পায়ে ব্যথা থাকায় তিনি লাঠিতে ভর করে চলেন। গাজীপুর শহরের পুকুর পাড়ের পলিথিনের খুপড়ি ঘরটিই আশ্রয়স্থল হিসেবে জানেন কল্পনা। পূবাইলে আশ্রমে নেওয়ার পরও তিনি ওই ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, সেখানে না ফিরলে তার ঘরে পানি ঢুকবে, ঘরের সবকিছু ভিজে যাবে।

এদিকে তার সন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের গাজীপুর কার্যালয়। উপযুক্ত প্রমাণ মিললে তাকে তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। ততদিন পর্যন্ত এ আশ্রমেই থাকবেন কল্পনা। এখানেই তার ভরন—পোষণ, চিকিৎসা সেবাসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা সরবরাহ করা হবে।

ভবঘুরে কল্পনার ঠাঁই হলো সমাজসেবার আশ্রমে

জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তার পাশে পলিথিন ও চটের বস্তা দিয়ে তৈরি করা ঘরে ওই নারী থাকতেন তা আগে বুঝতে পারিনি। আগে মনে করতাম সেখানে কেউ হয়তো কোনো মালামাল রাখার জন্য ওই অস্থায়ী ঘরটি তৈরি করেছে। পরে জানতে পারলাম সেখানে কল্পনা থাকেন। একদিন ওই ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম কিছু মানুষ ঘরের ভেতর উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সেখানে ওই মহিলা বসবাস করেন।

তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধা কল্পনা মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ এবং বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার তাকে গাজীপুরের পূবাইলে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেখানে সারা দেশ থেকে আসা অনেক অসহায় ও ভবঘুরে বসবাস করছেন। অন্যদের মতো তাকেও বিনামূল্যে থাকা, খাবার ও পোশাকসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। পরবর্তীতে তার কোনো স্বজনের খবর পেলে কল্পনাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

মো. আমিনুল ইসলাম/এনআইবি/এএসএম

Read Entire Article