সারা বছর আহরিত ইলিশের দুই-তৃতীয়াংশ পাওয়া যায় জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে। এই তিন মাসকেই মূলত ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর বরিশাল বিভাগে নদী ও সাগরে ভরা মৌসুমেও গত বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ কম ইলিশ আহরিত হয়েছে। যা গত চার বছরের মৌসুম হিসাবে সবচেয়ে কম।
জানা গেছে, এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই দেশে ইলিশ সংকট ছিল প্রকট। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। জেলেরা নদী-সাগরে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ পাননি। ভরা মৌসুম শেষে ইলিশ সংকটের চিত্র ফুটে উঠেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ভরা মৌসুমের তিন মাসে বরিশাল বিভাগে ইলিশ আহরণ হয় ৭৯ হাজার ৩১০ টন। গত বছর একই সময়ে আহরিত হয় এক লাখ তিন হাজার ৬৪৭ টন। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৪ হাজার ৩৩৭ টন (২৩ শতাংশ) কম ইলিশ আহরিত হয়।
এর আগে ২০০৩ সালের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এক লাখ তিন হাজার ৭৯৭ টন এবং ২০২২ সালে একই সময়ে এক লাখ পাঁচ হাজার ৫১৫ টন ইলিশ আহরণ হয়েছিল। এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত তিন বছর ধরে ইলিশ উৎপাদন কমলেও এর হার ছিল খুব কম। ২০২৩ সালে আগের বছরের চেয়ে এক হাজার ৭১৮ টন কম আহরণ হয়। ২০২৪ সালে আগের বছরের সঙ্গে প্রায় সমান ছিল। ২০২৪ সালে মাত্র দেড়শ টন কম পাওয়া যায়। এ বছর আহরণ ২৩ ভাগ কমে যাওয়ায় ইলিশ সম্পদের জন্য অশনিসংকেত দিচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুধু বরিশাল বিভাগে নয়, সারাদেশেই ইলিশ উৎপাদন গত এক বছরে আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ইলিশ আহরণ ২০২৪ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কম হয়েছে। এ দুই মাসে আহরণ হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯৪ টন, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২২ হাজার ৯৪১ দশমিক ৭৮ টন কম, যা শতাংশে ৩৮ দশমিক ৯৩।
আরও পড়ুন:
জালে উঠছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনে ৩১৭৩ গ্রেফতার, ১২২১ নৌযান জব্দ
তথ্য অনুযায়ী, মা ইলিশের প্রজনন মৌসুম প্রতিবছর আশ্বিনের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মাঝে রেখে ২২ দিন আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ৮০ ভাগ মা ইলিশ এই সময়ে ডিম দেয়। যে কারণে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়টি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ও পরবর্তী সময় আট মাস জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি কার্যকরের ওপর নির্ভরশীল। এ বছর ৪ অক্টোবর শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা গত শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন এই আট মাস জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ কর্মসূচি পালিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভূমিকায় গত বছর থেকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। বাধা দিতে গেলে উল্টো হামলা করেছেন জেলেরা। ফলে বেপরোয়া মা ইলিশ শিকার ও জাটকা নিধনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ বছরের ইলিশ উৎপাদনে। যার ফলে উৎপাদন কমেছে।
এসব বিষয়ে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, কয়েকটি কারণে ইলিশ উৎপাদন কমেছে। প্রধান দুটি কারণ হলো, অভ্যন্তরীণ নদী ও মোহনায় নাব্য সংকট ও অতিরিক্ত আহরণ। এ দুটির দ্রুত সমাধান না হলে ইলিশ থাকবে না।
তিনি বলেন, অক্টোবরের দিকে ইলিশের প্রজনন হয় নদীতে। পরবর্তী সময়ে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাটকা বড় হতে সাগরে চলে যায়। বেশিরভাগ জাটকা মোহনায় নিধন হচ্ছে। ইলিশ রক্ষায় নদীতে মৎস্য অধিদপ্তরের নানা কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু সাগরে কোনো কর্মসূচি নেই। ফলে নদীতে উৎপাদন বাড়লেও সাগরে যাওয়া জাটকা আর রক্ষা হচ্ছে না। জেলেদের হামলার প্রবণতা বেড়েছে বলেও স্বীকার করেন প্রকল্প পরিচালক।
বিভাগীয় মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, সদ্য শেষ হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বিভাগের ছয় জেলায় তিন হাজার ৫৩১টি অভিযান চালানো হয়। এতে এক হাজার ৩৬৩টি মামলা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৮৯৩ জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছর ২২ দিনে অভিযান হয়েছিল তিন হাজার ৩৯৪টি। এক হাজার ৫৭টি মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয় ৬৮১ জনকে। এ হিসাবে দেখা যায়, এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড দুই-ই গত বছরে চেয়ে বেশি হয়েছে।
শাওন খান/এমএন/এএসএম

3 hours ago
4









English (US) ·