ভরা মৌসুমেও বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম
ভরা মৌসুমেও জয়পুরহাটের বাজারগুলোতে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। চালের প্রকার ভেদে মোটা ও চিকন চালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩-১০ টাকা।
জয়পুরহাট শহরের পৌর বাজারগুলোর খুচরা চাল বিক্রেতারা জানান, প্রায় এক মাস থেকে চালের দাম বাড়তির দিকে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষরা পড়েছেন বিপাকে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) জয়পুরহাট পৌর শহরের নতুনহাট, পূর্ববাজার, আমতলী ও শহরের সাহেব বাজারে সরেজমিন খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, প্রায় এক মাস থেকে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। তারা মহাজনের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনে কেজি প্রতি সামান্য লাভে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন।
জয়পুরহাটে ঝিরাশাল প্রতি কেজি ৬ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, জয়পুরহাটে উৎপাদিত কাটারি প্রকার ভেদে কেজি প্রতি ৭-৮ টাকা বেড়ে ৭০-৭৫ টাকা, বিআর ২৮ চাল কেজিতে ৭ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা, স্বর্ণা ৫ জাতের চাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা এবং জয়পুরহাট জেলার পদ্মা রাইস মিলের চিকন কাটারি চালের ৭৮ টাকা থেকে বেড়ে ৮৫ টাকা কেজি খুচরা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জয়পুরহাট জেলায় এ মৌসুমে ৫৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি থেকে চাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার টন।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পদ্মা রাইস মিলের ২৫ কেজির বস্তায় অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে ১২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত কাটারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা কেজি দরে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, যেভাবে চালের বাজার ঊর্ধ্বগতিতে যাচ্ছে, তাতে সরকারের উচিত বেশি করে চাল আমদানি করে বাজার ঠিক রাখা।
জয়পুরহাট পৌর শহরের খুচরা চাল বিক্রেতা মোস্তাক আহম্মেদ জানান, গত প্রায় এক মাস থেকে তারা মহাজনের কাছ থেকে মেমোমূলে পাইকারিতেই বেশি দামে কিনে চালের প্রকার ভেদে ২-৪ টাকা লাভে বিক্রি করছেন। তিনি মনে করেন, সরকার বেশি বেশি চাল আমদানি করলে বড় বড় মিল মালিকরা বাধ্য হবে চালের দাম কমাতে।
আরেক খুচরা বিক্রেতা বলেন, এবার ধানের দাম একটু বেশি। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা অজুহাত পেয়েছেন।
চাল কিনতে আসা প্রতুল চন্দ্র কালবেলাকে জানান, তিনি সাধারণত একটি মিল থেকে চাল কিনেন। এবার ওই মিলের চাল ৮৫ টাকা কেজি হওয়ায়, ভারতের কাটারি চাল ৭১ টাকা কেজি দরে কিনলেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বাগুন গ্রামের মন্টু রবি দাশ শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বর এলাকার প্রধান সড়কের পাশে চর্মকার হিসেবে কাজ করেন। আয়-রোজগার তেমন হয় না। মন্টু জানান, তিনি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল কিনে খান। সে চাল কেজি প্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। তাকে এখন ৬০ টাকা কেজি দামে কিনতে হচ্ছে।
গুয়াবাড়ি ঘাট এলাকার রিকশাচালক আব্দুল আলীম জানান, তাকে চাল কিনে খেতে হয়। গত এক মাস থেকে ৫-৬ টাকা কেজি বেশি দামে তাকে চাল কিনতে হচ্ছে। অন্যান্য জিনিসের দামও বেশি। কিছু দিন থেকে শুধু তরকারির দাম কম।
শনিবার জয়পুরহাট জেলা বাসদ চালসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও পথসভা করেছে। তারা রেশনিং ব্যবস্থায় ন্যায্যমূল্যে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে বিক্রির দাবি জানিয়ে মজুতদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান।
জয়পুরহাট জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ও অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কেএম লায়েক আলী কালবেলাকে জানান, গত বন্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর বাজারে ধানের সরবরাহ কম। দামও আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি। সরকার নির্ধারিত যে পরিমাণ ধান-চাল মজুদ করার আইনগত বিধান রয়েছে তার চেয়েও কম মজুদ আছে মিলারদের গুদামে। তার মতে, সরকারকে চাল আমদানি করতে হবে এবং সেই আমদানিকৃত চাল যেন দ্রুত দেশে আসে। তাহলে বাজার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে।