ভাগাড়ের দুর্গন্ধে বন্ধের পথে প্রাথমিক বিদ্যালয়
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শরীয়তপুর পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং করা হচ্ছে কীর্তিনাশা নদীর তীরে। দীর্ঘদিন ধরে ময়লা ফেলার কারণে ক্রমশই বিষিয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের জনজীবন। ভাগাড়ের দুর্গন্ধে নদীর তীরে থাকা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টিকতে না পারায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, আবর্জনার পচা দুর্গন্ধে সারা বছরই তাদেরকে ক্লাস করতে হয় জানালা বন্ধ করে। এর ফলে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ঝরে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিদ্যালয়টিকে বাঁচাতে দ্রুত এই ভাগাড়টি সরানো জরুরি। পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শরীয়তপুর পৌরসভা। তবে প্রতিষ্ঠার এতদিনেও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও শোধনাগার তৈরি হয়নি পৌরসভাটির। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে শহরের কোটাপাড়া এলাকার কীর্তিনাশা নদীর পাড়ের খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ময়লা। এদিকে, ফেলে রাখা এসব ময়লার বিকট দুর্গন্ধ বাতাসের সঙ্গে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে নদীর ওপারের নড়িয়া উপজেলার গাগ্রী
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শরীয়তপুর পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং করা হচ্ছে কীর্তিনাশা নদীর তীরে। দীর্ঘদিন ধরে ময়লা ফেলার কারণে ক্রমশই বিষিয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের জনজীবন। ভাগাড়ের দুর্গন্ধে নদীর তীরে থাকা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টিকতে না পারায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, আবর্জনার পচা দুর্গন্ধে সারা বছরই তাদেরকে ক্লাস করতে হয় জানালা বন্ধ করে। এর ফলে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ঝরে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিদ্যালয়টিকে বাঁচাতে দ্রুত এই ভাগাড়টি সরানো জরুরি।
পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শরীয়তপুর পৌরসভা। তবে প্রতিষ্ঠার এতদিনেও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও শোধনাগার তৈরি হয়নি পৌরসভাটির। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে শহরের কোটাপাড়া এলাকার কীর্তিনাশা নদীর পাড়ের খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ময়লা।
এদিকে, ফেলে রাখা এসব ময়লার বিকট দুর্গন্ধ বাতাসের সঙ্গে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছে নদীর ওপারের নড়িয়া উপজেলার গাগ্রীজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে জানালা-দরজা বন্ধ রেখেই চালাতে হয় ক্লাস। তবুও গন্ধ যেন পিছু ছাড়েনা। ময়লার ভাগাড়ের তীব্র গন্ধে মাঝেমধ্যেই শিক্ষার্থীরা হয়ে পড়ছে অসুস্থ। এছাড়াও নদীর তীরে ডাম্পিং করা ময়লা নদীতে মিশে দূষিত করছে নদীর পানি। আর আর সেই পানি ব্যবহার করে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর যেই প্রান্তে ময়লা ডাম্পিং করা হয়, তার বিপরীত পাড়ে মাত্র তিনশ মিটার অদূরে গাগ্রীজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর বিদ্যালয়ের পাশেই ঘনবসতি। নদীর পাড়ে খোলা জায়গায় ফেলা ময়লার পানি নদীতে মিশে যাচ্ছে। সেই পানি এই এলাকার মানুষেরা রান্নাবান্না ও গোসলের জন্য ব্যবহার করছে। সামান্য বাতাস এলেই পুরো এলাকা দুর্গন্ধে ছেয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একপ্রকার বাধ্য হয়েই ক্লাস করছে।
নুসরাত নামের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, নদীর ওপারে ময়লা ফেলা হয়। সেই গন্ধে আমরা পড়াশোনা করতে পারি না। মাঝেমধ্যে গন্ধের কারণে প্রচুর মাথাব্যথা হয়। তাছাড়া গরমের দিনে জানালা বন্ধ করে অন্ধকারে ক্লাস করতে হয়। আমরা অনেক কষ্টে আছি। সরকার যেন ময়লার ভাগাড়টি এখান থেকে সরিয়ে নেয়।
বিদ্যালয়টির পাশেই বসবাস করে তারিন নামের আরেক শিক্ষার্থী। তার ভাষ্য, পৌরসভা ফেলা ময়লার গন্ধে তার পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরা প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারিন বলেন, স্কুলে গেলে ময়লার গন্ধ, আবার বাড়িতে গেলেও ময়লার গন্ধ। এই গন্ধের কারণে আমার দাদা-দাদি ও ছোট-ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা ঠিকমতো বাসায় খাবার খেতে পারি না দুর্গন্ধে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।
এদিকে ময়লার দুর্গন্ধ ও নদীর পানি ব্যবহার করে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে স্থানীয়রা। সেলিনা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ময়লার কারণে বাসায় থাকতে পারি না। আমাদের ব্যক্তিগত ডিপ-টিউবওয়েল না থাকায় নদীর পানি নিয়েই রান্নাবান্না আর গোসল করি। এই ময়লা ফেলার কারণে দূষিত পানি ব্যবহার করায় আমরা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। আমাদের এখানে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। আমরা চাই এই ময়লার ভাগাড় এখান থেকে দূরে নিয়ে যাওয়া হোক।
একই সমস্যার কথা বললেন বিদ্যালয়পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক। রুহুল আমিন নামের ওই ব্যক্তি বলেন, আমরা যেমন কষ্ট ভোগ করছি, পাশাপাশি আমাদের শিশুরাও একই কষ্ট ভোগ করছে। ওরা গন্ধের কারণে বাড়িতেও থাকতে চায় না, আবার স্কুলেও আসতে চায় না। মাঝেমধ্যে স্কুলে গেলেও কয়েকটি ক্লাস করেই বাড়ি চলে আসে। এমন অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একদিন বন্ধ হয়ে যাবে।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, একসময়ে এই স্কুলটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল তিন শতাধিক। ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থী, অনুপস্থিতির হার বেড়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮১ জনে। অতি দ্রুত ময়লার ভাগাড়টি না সরিয়ে নিলে বন্ধ হওয়ার উপক্রম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমনটাই দাবি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।
গাগ্রীজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আক্তার হোসেন কলিন্স বলেন, এখানে ময়লার ভাগাড়ের কারণে প্রচণ্ড রকমের গন্ধের সৃষ্টি হয়। এই গন্ধের কারণে এই বিদ্যালয়ে বসা মুশকিল। বাচ্চারা বসতে পারে না। ক্লাস রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে ক্লাস নিতে হয়। অনেকদিন এমন হয়েছে, বাচ্চারা দুর্গন্ধে বমি করে দিয়েছে।
এদিকে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও শোধনাগার নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর প্রশাসক। আর এটি নির্মাণ হলে এসব সমস্যার অবসান হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
শরীয়তপুর পৌরসভার প্রশাসক ওয়াহিদ হোসেন বলেন, কোটাপাড়া ডাম্পিং স্টেশনে গত সাত বছর ধরে পৌরসভার ময়লা ডাম্পিং করা হয়। সম্প্রতি পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও শোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। তখন ওই এলাকায় আর এমন সমস্যা হবে না।
বিধান মজুমদার অনি/কেএইচকে/এমএস
What's Your Reaction?