ভাটার পেটে জমির টপ সয়েল, ঝুঁকিতে কৃষি
ফসলি জমির প্রাণ হিসেবে পরিচিত উপরিভাগের মাটি বা ‘টপ সয়েল’ কাটার মহোৎসব চলছে লালমনিরহাটে। আমন ধান ঘরে তোলার পরপরই শুরু হয়েছে এই মাটি লুটের যজ্ঞ। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের উর্বর কৃষিজমি থেকে দেদারসে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমি, নষ্ট হচ্ছে মাটির উর্বরতা। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও থামছে না ‘মাটিখেকো’ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। ২০২৪ সালের সরকারি তালিকা অনুযায়ী, লালমনিরহাটে নিবন্ধিত ইটভাটার সংখ্যা ২০টির কিছু বেশি। অথচ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে অন্তত ৩৪টি ভাটা। প্রশাসনের অভিযানে মাঝেমধ্যে এসব ভাটা বন্ধ বা জরিমানা করা হলেও, নানা অজুহাতে কিছুদিন পরই তা পুনরায় চালু হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে, অথচ কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে। ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ফসলি জমি রক্ষায় কেবল সচেতনতা নয়, প্রশাসনের কঠোর ও স্থায়ী পদক্ষেপও জরুরি বলে মনে করছে স্থানীয় সচেতন মহল। বানবাসা মোড় এলাকার কৃষক মাহা
ফসলি জমির প্রাণ হিসেবে পরিচিত উপরিভাগের মাটি বা ‘টপ সয়েল’ কাটার মহোৎসব চলছে লালমনিরহাটে। আমন ধান ঘরে তোলার পরপরই শুরু হয়েছে এই মাটি লুটের যজ্ঞ। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের উর্বর কৃষিজমি থেকে দেদারসে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমি, নষ্ট হচ্ছে মাটির উর্বরতা। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও থামছে না ‘মাটিখেকো’ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।
২০২৪ সালের সরকারি তালিকা অনুযায়ী, লালমনিরহাটে নিবন্ধিত ইটভাটার সংখ্যা ২০টির কিছু বেশি। অথচ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে অন্তত ৩৪টি ভাটা। প্রশাসনের অভিযানে মাঝেমধ্যে এসব ভাটা বন্ধ বা জরিমানা করা হলেও, নানা অজুহাতে কিছুদিন পরই তা পুনরায় চালু হয়।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে, অথচ কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে।
ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ফসলি জমি রক্ষায় কেবল সচেতনতা নয়, প্রশাসনের কঠোর ও স্থায়ী পদক্ষেপও জরুরি বলে মনে করছে স্থানীয় সচেতন মহল।
বানবাসা মোড় এলাকার কৃষক মাহাফুজ রহমান জানান, আবাদি জমির পাশেই ভাটা তৈরি হওয়ায় এবং পাশের জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করে দেওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। পাশের জমি নিচু হয়ে যাওয়ায় আমার জমি উঁচু হয়ে আছে, ফলে জমিতে সেচের পানি (মটরের পানি) উঠছে না। তাই ক্ষতি হবে জেনেও বাধ্য হয়ে ভাটা কর্তৃপক্ষের কাছে মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন-
ল্যাবেই বন্দি উদ্ভাবন, প্রয়োগ নেই মাঠে
কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ পান চাষিরা
সুদিন ফিরেছে সমতলের চা চাষে, দামে খুশি চাষিরা
একই পরিস্থিতির শিকার সাপটিবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক নয়ন ইসলামের। তিনি বলেন, এখনও জমির ফসল ঘরে তুলতে পারিনি, অথচ পাশের জমির মাটি বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আমি মাটি বিক্রি না করলে আমার জমি উঁচু হয়ে থাকবে, সেখানে আর ফসল হবে না। আবার মাটি কাটলে সেই জমিতে নতুন করে ফসল ফলাতেও অনেক কষ্ট হবে। আমরা চাই ইটভাটাগুলো যেন কৃষিজমি থেকে মাটি না কেনে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটির উপরিভাগের ৮-১০ ইঞ্চি স্তর বা টপ সয়েলে ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ ও পুষ্টি উপাদান সবচেয়ে বেশি থাকে। কৃষি বিভাগের মতে, এই স্তর কেটে নিলে জমির উর্বরতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায় এবং তা পুনরায় ফিরে আসতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। টপ সয়েল সরে গেলে মাটির নিচের শক্ত ও পাথুরে স্তর বেরিয়ে আসে, যেখানে পানি ধারণক্ষমতা থাকে না বললেই চলে। এতে জমি ধীরে ধীরে অনাবাদি হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কৃষি প্রধান এই জেলায় আবাদি জমি কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কাও প্রবল হচ্ছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (কৃষিবিদ) মো. মতিউর রহমান বলেন, সীমান্তবর্তী এই জেলার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। কিন্তু ইটভাটার কারণে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি যেন তারা টপ সয়েল বিক্রি না করেন। রাসায়নিক ও জৈব সারের সমন্বয়ে যে উর্বর স্তর তৈরি হয়, তা একবার নষ্ট হলে পূরণ করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে পরিবেশবান্ধব ‘ইকো ব্রিকস’ বা ব্লক ইট তৈরি হচ্ছে। সমাজের মানুষকে এই ইটের প্রতি আগ্রহী হতে হবে। মাটির ইটের চাহিদা কমলে ফসলি জমির টপ সয়েল রক্ষা পাবে।
এফএ/জেআইএম
What's Your Reaction?