ভাতা বিতরণে ‘উপায়’ চান মন্ত্রী, অধিদপ্তর বলছে ভোগান্তি বাড়বে

2 months ago 29

মোবাইল আর্থিক সেবা ‘উপায়’র সারাদেশে হাতে গোনা কিছু এজেন্ট রয়েছে। অথচ তাদের মাধ্যমে দেশজুড়ে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ করতে চায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সীমিত সংখ্যক এজেন্ট থাকায় ভাতাভোগীরা ‘উপায়’ থেকে টাকা তুলতে বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। বিষয়টি জানিয়ে তারা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে।

জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ করে থাকে। ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে এ ভাতা দেশের শীর্ষ দুটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থা দুটি ভালোভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে উপায়’র মাধ্যমে ভাতা বিতরণের জন্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর গত বছরই সমাজসেবা অধিদপ্তর উপায়ের নানা সুযোগ-সুবিধা বিশ্লেষণ করে দেখে। তাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে—বাজারে নতুন আসা উপায়ের দেশে পর্যাপ্ত এজেন্টই নেই। ফলে তাদের যে এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেখানে ভাতাভোগীরা ভাতা উত্তোলনে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়বেন।

বিকাশের সারাদেশে সাড়ে তিন লাখের বেশি এজেন্ট আছে। নগদেরও এজেন্ট সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। সেখানে উপায়ের সারাদেশে এজেন্ট সংখ্যা মাত্র কয়েক হাজার। ফলে তাদের পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এদিকে, উপায়ের ক্যাশ আউট চার্জ সামান্য কম। কিন্তু তাতে ভাতাভোগী পর্যায়ে কোনো পার্থক্য তৈরি হবে না। কারণ, ভাতার সঙ্গে ক্যাশআউট চার্জ সরকার ও এমএফএস প্রতিষ্ঠান মিলে ভর্তুকি হিসেবে দিয়ে দেয়। ফলে ভাতাভোগীকে কোনো অপারেটরের জন্যই ক্যাশআউট চার্জ খরচ করতে হয় না।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অফিসিয়াল চিঠি পাঠিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল। চিঠিতে বলা হয়েছে, উপায়’র সাধারণ ক্যাশ আউট চার্জ ‘বিকাশ’ ও ‘নগদ’-এর চেয়ে কিছুটা কম হলেও তা সামাজিক নিরাপত্তার আওতাধীন উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া দেশব্যাপী ‘উপায়’-এর এজেন্ট পয়েন্ট সংখ্যা অপর্যাপ্ত।

বর্তমান ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বিকাশ ও নগদের বিতরণ এলাকা হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হয়। যে প্রতিষ্ঠান যে এলাকার দায়িত্বে থাকে, সেখানে পুরো ভাতাই সেই প্রতিষ্ঠান এককভাবে বিতরণ করে। ফলে এ অবস্থায় উপায়কে কোনো এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হলে সেখানে ভাতাভোগীরা টাকা উত্তোলনে সমস্যায় পড়ার কথা।

আরও পড়ুন

চলতি অর্থবছরে আরও ৯ লাখ সামাজিক নিরাপত্তা ভাতাভোগী যুক্ত হচ্ছে। এ অজুহাতে উপায়কে যুক্ত করার জন্য বলছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাশাপাশি বর্তমানে দায়িত্বে থাকা দুই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠানের আপত্তি আছে।

দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা প্রদানের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের কয়েক বছরের চুক্তি আছে। সে চুক্তি এখনো শেষ হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী নতুন ভাতাভোগী যুক্ত হলেও বর্তমান দুটি এমএফএসই দায়িত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে চাচ্ছে, যা আমাদের দৃষ্টিতে চুক্তির ব্যত্যয়।

জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, এতদিন আমরা বিকাশ ও নগদে ভাতাভোগীদের টাকা দিয়ে আসছি। মন্ত্রণালয়ে একটা নির্দেশনা ছিল উপায় নিয়ে। সম্ভাব্যতা যাচাই করে য পাওয়া গেছে, সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে আবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছি আমরা। এখন মন্ত্রণালয় এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

এএএইচ/এমকেআর/এএসএম

Read Entire Article