ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে পলায়নের পর অস্থির বাংলাদেশের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্ৰহণ করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূস শপথগ্রহণের পর থেকেই খুশির হওয়া বইছে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে লস্করদিঘি এলাকার পশ্চিমপাড়ায়। কারণ এই এলাকাতেই রয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধানের শ্বশুরবাড়ি।
পশ্চিমপাড়ার একটি বাসায় বড় হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্ত্রী আফরোজি বেগম। ফলে, এলাকার জামাই প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধান হওয়ায় গর্বের শেষ নেই পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দাদের।
জানা যায়, ২০০৬ সালের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর আরও অনেকবার পশ্চিমবঙ্গে আসলেও পশ্চিমপাড়া আসা হয়ে ওঠেনি তার।
বর্ধমানের বাড়িতে বসে ড. ইউনূসের শ্যালক আশফাক হোসেন জানিয়েছেন, এমন অমায়িক মানুষ সচরাচর দেখা যায় না। মাটির মানুষ বলা চলে তাকে। আমাদের সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক। আমি ওপার বাংলায় গেলে দুলাভাইয়ের বাসায় উঠি। হোটেলে ওঠার কথা বললেই তিনি রেগে গিয়ে বলতেন, আমার বাসা থাকতে তুমি হোটেলে কেন উঠবে।
বোন-দুলাভাইয়ের একটি ট্রেন ভ্রমণের কথা বলতে গিয়ে আশফাক জানান, বাংলাদেশ ফেরার দিন বর্ধমান থেকে হাওড়া যাওয়ার সময় জামাইবাবুর জন্য ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু তিনি ফার্স্ট ক্লাসে না গিয়ে সাধারণ কামরায় ওঠেন। পরে ফোনে আশফাককে ড. ইউনূস জানান, সাধারণ কামরায় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কীভাবে হাওড়া পৌঁছেছিলেন।
মূলত, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারবেন বলেই ড. ইউনূস ফার্স্ট ক্লাস ছেড়ে সাধারণ কামরায় উঠেছিলেন বলে বিশ্বাস আশফাকের।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ড. ইউনূসের কোন কোন ক্ষেত্রগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত? এ বিষয়ে আশফাকের বক্তব্য, দেশে যাতে শান্তি বিরাজ করে সে দিকটাই প্রথমে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এছাড়া, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গের সম্পর্ক বজায় রাখা, ভারতের সঙ্গে ভিসা প্রক্রিয়া সরলীকরণ করার ওপরেও নজর দেওয়া উচিত। কারণ, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ এদেশে চিকিৎসা করাতে আসেন।
আশফাকের দাবি, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য ভিসার ব্যবস্থা সরলীকরণ করলে আরও ভালো হয়, বিশেষ করে স্পট ভিসা চালু হওয়া উচিত।
ড. ইউনূসের শ্যালকের অভিযোগ, আমাদের বাংলাদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা পেতে খুব সমস্যা হয়। অনেক সময় ২০-২২ দিন লেগে যায়। সেক্ষেত্রে দিদি যদি হঠাৎ প্রয়াত হন, তাকে দেখারও সুযোগ পাবো না। তাই দু’দেশের সরকার যদি বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করে একটা সমাধানযোগ্য অবস্থায় নিয়ে আসে, তাহলে খুব ভালো হয়।
ডিডি/কেএএ/