ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, আটক ১২

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে নগরের চশমাহিল এলাকায় অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ড. রাজীব রঞ্জনের বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। গভীর রাতের ওই ঘটনায় ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত দেড়টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তিন থেকে চার রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের একাধিক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন শিক্ষার্থী আহত হন। আহত দুজনকে পাশের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। বিক্ষোভকারীরা বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এ ঘটনায় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নগ

ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, আটক ১২

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে নগরের চশমাহিল এলাকায় অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ড. রাজীব রঞ্জনের বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। গভীর রাতের ওই ঘটনায় ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত দেড়টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তিন থেকে চার রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের একাধিক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন শিক্ষার্থী আহত হন। আহত দুজনকে পাশের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। বিক্ষোভকারীরা বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এ ঘটনায় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নগরের বিপ্লব উদ্যান, দুই নম্বর গেট ও ওয়াসা মোড় এলাকায় শতাধিক তরুণ-যুবক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা সড়ক অবরোধ করে ‘হাদি, হাদি’ স্লোগানসহ হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই নম্বর গেইট ও ষোলশহর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা চশমাহিল এলাকায় জড়ো হন। সেখানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির ভেতর থেকে আসবাবপত্র বের করে আগুন ধরানো হয়। একই সময় নওফেলের বাসভবনের সামনে একটি মোটরসাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বিক্ষোভ চলাকালে ছাত্র-জনতা চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে তারা ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধের দাবিও তোলে। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে সরে যান। তবে কিছুক্ষণ পর আবার একটি মিছিল নিয়ে লোকজন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে জড়ো হয়। পুলিশ তাদের সরে যেতে অনুরোধ করলেও তারা অবস্থান চালিয়ে যায়। পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের দিক লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। এরপর পুলিশ ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীরা আশপাশের গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন আলম জানান, ১৫-২০ জন ব্যক্তি ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় এবং এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।

বিক্ষোভকারীদের একজন মোহাম্মদ তানভীর দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভারতে বসে ওসমান হাদির ওপর হামলার ষড়যন্ত্র করেছে। এসব বক্তব্যের কারণেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। তিনি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন মোটরসাইকেলে আসা দুজন দুর্বৃত্ত খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সবশেষ গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই চট্টগ্রামে বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। একপর্যায়ে বিক্ষোভের কারণে জিইসি মোড়মুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা এ সময় ‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাঁড়াও’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে।
 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow