কলকাতায় একটি হাসপাতালে দায়িত্বরত নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তোলপাড় গোটা ভারত। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। কিন্তু তার মধ্যেও থেমে নেই বর্বরোচিত নির্যাতন। প্রতিদিনই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে উঠে আসছে নারী ও শিশু ধর্ষণের ভয়ানক সব ঘটনা।
গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ভারতের কেবল একটি সংবাদমাধ্যম ঘেঁটেই অন্তত নয়টি ধর্ষণের নতুন খবর পাওয়া গেছে। এনডিটিভির এসব প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই শিশু, যাদের একজনের বয়স মাত্র চার বছর।
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায়। সেখানে ৩৫ বছর বয়সী এক যুবক চার বছরের এক দলিত শিশুকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় ওই ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে আহত হন বলে জানানো হয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি রাজস্থানের। সেখানে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে দুই ব্যক্তি একটি সরকারি হাসপাতালের পেছনে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে।
তৃতীয় ঘটনাটিও রাজস্থানের। রাজ্যের কোটা শহরে ১৩ বছরের এক মেয়েকে নিজ বাড়িতেই দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
চতুর্থ ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের থানে শহরে। সেখানে প্রতিবেশীর ১৩ বছরের মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্র্রেফতার করা হয়েছে। মেয়েটির বাবা-মা বাড়িতে না থাকলে তিনি সেখানে যেতেন এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নাবালিকার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরের ঘটনাটি মধ্য প্রদেশের। সেখানে ১৮ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ, ছেলে দুটো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে মেয়েটির আপত্তিকর ছবি বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছিল এবং সেই ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো, অভিযুক্তদের একজন সেই বাড়ির মালিকের ছেলে।
ষষ্ঠ ঘটনাটি ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে। সেখানে ১৯ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একজন অটোরিকশা চালকের বিরুদ্ধে। বলা হয়েছে, পেশায় নার্সিং ট্রেইনি ওই মেয়েটি বাসায় ফিরতে অটোরিকশায় উঠেছিলেন। এসময় চালক তাকে পানি পান করতে সাধেন। সেই পানি পান করতেই অজ্ঞান হয়ে যায় মেয়েটি। পরে তাকে ধর্ষণ করেন ওই ব্যক্তি।
সপ্তম ঘটনাটি হয়তো সবচেয়ে বর্বরোচিত ও হৃদয়বিদারক! কারণ, এখানে অভিযুক্ত খোদ বাবা। অভিযোগ উঠেছে, মহারাষ্ট্রের বদলাপুর শহরের ওই ব্যক্তি একাধিকবার নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন। নির্যাতনের সবশেষ ঘটনাটি ঘটে গত ২২ আগস্ট। ওইদিন মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে থানায় অভিযোগ করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। অভিযুক্ত ব্যক্তি বর্তমানে পলাতক।
অষ্টম ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। সেখানে ১৪ বছরের এক মেয়েকে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ভুক্তভোগীর বয়স কম হওয়ায় বিষয়টি ‘সম্মতিসূচক শারীরিক সম্পর্ক’ হওয়ার দাবি নাকচ করে দিয়েছেন বিচারক।
সবশেষ ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের মিরাটে। অভিযোগ উঠেছে, সেখানকার এক মুদি দোকানদার চার শিশুসহ অন্তত ছয়জনকে যৌন নির্যাতন করেছেন। সেই দৃশ্য ভিডিও করে তিনি ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ আদায় করতেন। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি তার দোকানে যাওয়া শিশু ও কম বয়সী ক্রেতাদের পানীয় সাধতেন। নেশাদ্রব্য মেশানো সেই পানীয় পান করে তারা অজ্ঞান হয়ে গেলে যৌন নির্যাতন করতেন ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। তার কাছে নির্যাতিতদের মধ্যে কয়েকজন ছেলে শিশুও রয়েছে।
কেএএ/