ভারতের আশাভঙ্গ: ট্রাম্প-মোদীর বিরোধ চরমে

1 month ago 7

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের উষ্ণ সম্পর্ক হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর কেন্দ্রে রয়েছে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতের ওপর আরোপিত বর্ধিত শুল্ক।

গত ৪ আগস্ট নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের বিপুল তেল আমদানি রুশ যুদ্ধযন্ত্রে অর্থায়ন করছে এবং এর জন্য দেশটিকে ২৫ শতাংশের চেয়েও অনেক বেশি শুল্ক গুনতে হবে।

যুদ্ধের আগে ভারতের তেলের মাত্র ০.২ শতাংশ সরবরাহ করতো রাশিয়া। এখন সেই হার বেড়ে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মূলত এই পরিবর্তনের ওপরেই ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। যদিও, এই তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারত নিজের জাতীয় স্বার্থ ও জ্বালানি নিরাপত্তার কারণ দেখাচ্ছে।

বাণিজ্য আলোচনায় অচলাবস্থা

দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই একটি ‘মিনি ট্রেড ডিল’ নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে এতে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের এক নির্বাহী আদেশ অনুসারে, আগামী ৭ আগস্ট থেকে ভারতের রপ্তানির ওপর নতুন ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে। তবে রাশিয়ার তেল কেনা ইস্যুতে অতিরিক্ত শুল্ক কত হবে তার পরিমাণ এখনো জানানো হয়নি।

ট্রাম্প আগেও অভিযোগ করেছিলেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের ১৯০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এতে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।

মধুর সম্পর্ক এখন তিক্ততায় ভরা

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি ও নরেন্দ্র মোদী একসঙ্গে টেক্সাস থেকে গুজরাট পর্যন্ত স্টেডিয়াম ভরা সমর্থকদের সামনে দু’দেশের বন্ধুত্ব উদযাপন করেছিলেন। ভারত তখন ন্যাটো মিত্রদের মতো সামরিক ও প্রযুক্তি সুবিধা পেয়েছিল। চীনের উত্থান ঠেকানোতে উভয়ের মধ্যে কৌশলগত ঐক্যও গড়ে উঠেছিল।

২০২৪ সালের ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এক জরিপে দেখা যায়, ৮৪ শতাংশ ভারতীয় মনে করতেন ট্রাম্পের ফিরে আসা ভারতের জন্য ভালো।

কিন্তু হোয়াইট হাউজে মোদীর গত ফেব্রুয়ারির সফরকালে ট্রাম্পের আচরণে ভারতীয় কূটনীতিকরা ‘অবাক’ হন বলেই একটি সাংবাদিক সূত্র জানিয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

ভারতের ব্যাংক অব বারোদা জানিয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারতের ২০২৬ সালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি থেকে ০.২ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে, যদিও এরপরও তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে।

বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গহনা ও টেক্সটাইল শিল্প। তবে ওষুধ ও ইলেকট্রনিকস খাতে বিদ্যমান শুল্কছাড় বহাল থাকছে, যা ভারতের জন্য কিছুটা স্বস্তির।

এ অবস্থায় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত ৪ আগস্ট বলেন, আমরা জটিল ও অনিশ্চিত সময়ের মধ্যে বাস করছি। আমরা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা চাই, যা ন্যায্য এবং প্রতিনিধিত্বমূলক—কিছু দেশের কর্তৃত্বাধীন নয়।

সামনে কী

দিল্লিতে আগামী ২৫ আগস্ট থেকে দুই দেশের মধ্যে ষষ্ঠ দফা বাণিজ্য আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মস্কো যাওয়ার কথা রয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও সেখানে যাবেন বলে জানা গেছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, এক সময়ের ঘনিষ্ঠ দুই রাষ্ট্রনেতার সম্পর্ক কি আবারো পুরোনো বন্ধুত্বে ফিরতে পারবে?

কেএএ/

Read Entire Article