ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়ায় রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা

3 months ago 51

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতমুখী রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে হুমকির মুখে পড়বে রপ্তানি কার্যক্রম।

দ্রুত ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সোমবার (১৯ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ৮টি ট্রাকে করে ৪৪ টন বরফায়ীত মাছ, ৭টি ট্রাকে করে ১৩৫ টন ভোজ্যতেল ও এক ট্রাকে ১৯ টন পাটজাত পণ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় রপ্তানি হয়, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। এদিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া কোনো পণ্যই রপ্তানি হয়নি।

মূলত যে ছয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে চার ধরনের পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত রপ্তানি হয়, যা এই বন্দরের রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে বন্দরে নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। শুরু থেকেই আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি হওয়ায় রপ্তানিমুখী বন্দর হিসেবে পরিচিতি পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত ভারতের সেভেন সিস্টার্সের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে ধীরে ধীরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে কমতে থাকে রপ্তানি বাণিজ্য।

বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার হিমায়িত মাছ, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল, তুলা, পিভিসি সামগ্রী, রড ও সিমেন্টসহ কয়েকটি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যায় হিমায়িত মাছ।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারতে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। আর চলতি অর্থবছরে গেলো এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয় ৪৫৩ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৩ টাকার পণ্য। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল, তুলা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মেলামাইন সামগ্রী ও শুঁটকি।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, হিমায়িত মাছের পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় প্লাস্টিক পণ্য, পিভিসি সামগ্রী, চিপস, বিস্কুট, ফলের স্বাদযুক্ত জুস ও তুলা। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকা মূল্যের এসব পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। ফলে এ পণ্যগুলো আমদানি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ায় রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মূলত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের সঙ্গে চলা কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই দেশটির সরকার আমদানির সুযোগ সীমিত করেছে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের। যা দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার দাবি তাদের।

স্থলবন্দরের মিতু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও আখাউড়া স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নিছার উদ্দিন ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, রপ্তানি বন্ধে ভারতের এই প্রজ্ঞাপনের কারণে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। যে কয়েকটি পণ্য আছে সেগুলো সুচারুরূপে চালু হলে কিছুটা হলেও অন্তত দাঁড়ানো যাবে। অন্যথায় সিএন্ডএফ এজেন্টের কাস্টমস, শ্রমিক, আমদানি-রপ্তানিকারক আমরা সবাই ক্ষতি সম্মুখীন হব। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন বলেন, মাছ, পাথর ও ভোজ্য তেল বাদে বাকি সব পণ্য বন্ধ করেছে ভারত সরকার। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুই দেশের সরকারকে বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরসনের জন্য অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রপ্তানি আয় কমবে, বন্দরের রাজস্বও কমবে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো চিঠি আমাদের কাছে আসেনি।
 

Read Entire Article