ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বেতন বঞ্চিত শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন

2 hours ago 1

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছেন ১৪ মাস ধরে বেতনবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ জানান তারা। 

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বেতনবঞ্চিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ‌‌মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছাড়ানোর অভিযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম। সে সময় তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরেন এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া থাকার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তবে বেতনবঞ্চিত শিক্ষকদের দাবি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের ব্যয় এবং ঘাটতির যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ এবং বানোয়াট। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আগের সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার ও ১৪ মাসের বেতন না দেওয়ার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরে সহকারী শিক্ষক সৈয়দা আরিফুন নাহার বলেন, গত ৫ বছরে ৬০ মাসের মধ্যে ৪৬ মাসের বেতন হয়েছে। বকেয়া রয়েছে ১৪ মাসের বেতন। গত ৫ বছরে শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ ও টিউশন ফি মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট আয় হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি ৯৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গায় করা দোকানের অগ্রীম, ভাড়া ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ গত ৫ বছরে আয় হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। প্রতি মাসে শিক্ষকদের ২৬ লাখ টাকা করে বেতন দিলেও মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অবশিষ্ট থাকে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রফিডেন্ট ফান্ডের নামে টাকা কাটা হলেও তা ফান্ডে জমা হচ্ছে না। দোকান ভাড়া ও অগ্রীম টাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্র্যাচুয়িটি ফান্ডে জমা থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন অযুহাতে মোটা অঙ্কের টাকা সেখান থেকে তুলে নেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষকরা খাতা দেখা, ডিউটি এরিয়াসহ কোনো বিলই পান না।

সৈয়দা আরিফুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম শিক্ষকদের বেতন না দেওয়ার মূল কারণ প্যাটার্ন ও বিধিবহির্ভূত অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ বলে উল্লেখ করেন। তাহলে ২০০৪ সালে ১০ নভেম্বর নিম্নমাধ্যমিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কীভাবে নিয়োগ পান, যেখানে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষদের কোনো পদই নেই। ২০০৪ সালে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ছিল।

২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষক আবু ইউসুফের কক্ষ থেকে ফাইল গায়েব করার অপরাধে মরিয়ম বেগম ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল এবং ফাইল গায়েব করার সহযোগী পিয়ন মোসলেম ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বরখাস্ত ছিলেন উল্লেখ করে আরিফুন নাহার বলেন, সংবাদ সম্মেলনে মরিয়ম বেগম জানান তিনি ২০০৯ সালে যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তায় বেগম খালেদা জিয়ার সভায় ভাষণ দেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। প্রশ্ন হলো, পিয়ন মোসলেমও কি বেগম খালেদা জিয়ার সভায় ভাষণ দেওয়ার কারণেই বহিষ্কৃত হয়েছিলেন? ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে বিধিবহির্ভূতভাবে ও অন্যায়ভাবে প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। তাহলে সেই আওয়ামী লীগ আমলেই ২০১৪ সাল থেকে তিনি কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে আছেন? কারণ ২০১৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠারটির গভর্নিং বডির দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা, মির্জা আজম, হারুনুর রশিদ মুন্না, শেখ হাসিনার পিএস লিকু গাজী, কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জানে আলম।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার কর্তৃক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা থেকে মরিয়ম বেগম শিক্ষকদের ৯ মাসের বেতন পরিশোধ করেছেন বলে দাবি করেছেন। তাহলে প্রশ্ন, ওই ৯ মাস কি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের থেকে বেতন বাবদ আয় হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তর প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক স্টেটমেন্ট খুঁজলেই পাওয়া যাবে।

সৈয়দা আরিফুন নাহার আরও অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের  দায়িত্ব নেওয়ার পরই মরিয়ম বেগম গ্রুপিং শুরু করেন। তিনি তার আজ্ঞাবহ শিক্ষকদের নিয়ে একটি সমিতি তৈরি করে জমি ও ফ্ল্যাট কেনেন। ঢাকার মাতুয়াইলে ১০ তলা ভবনের একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক তিনি এবং একই সাথে চনপাড়ায় ২৭ কাঠা জমি রয়েছে তার নামে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালে জানুয়ারী মাসে প্রতিষ্ঠানের গর্ভনিং বডির সভাপতি হয়ে আসেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জানে আলম। তিনি মুজিব কেল্লা প্রজেক্টের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পি.ডি) ছিলেন। তিনি মরিয়ম বেগমের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে তাকে খালি চেকে স্বাক্ষর করে দিতেন। মরিয়ম বেগম সেই টাকায় প্রতিষ্ঠানে বিলাস বহুল অফিস নির্মাণ করেন এবং অতিরিক্ত পিয়ন, দারেয়ান ও আয়া  নিয়োগ দেন। সে সময় থেকে আমাতের বেতন বকেয়া হতে শুরু করে।

সৈয়দা আরিফুন নাহার দাবি করেন, সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এডিটেড ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে আলমারি ভাঙা, নথিপত্র, নগদ টাকা ও ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করেন তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণেদিত এবং অসম্মানজনক। সামাজিক যোগযোগের মাধ্যমে বেতন না পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করলে আমিকে তিনি শোকজ করেন এবং প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যদিও এই সিদ্ধান্ত নিয়মবহির্ভূত এবং পরবর্তীতে ৮ শিক্ষক-কর্মচারীকে ক্রমান্বয়ে নানা অজুহাতে শোকজ করেন তিনি। এভাবে তিনি শিক্ষকদের মাঝে ভীতির সঞ্চয় করেন যাতে কেউ আর বেতনের জন্য আবেদন না করেন।

তিনি বলেন, ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের মরিয়ম বেগম হত্যা ও ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালের পর থেকে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার মান অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। প্রশাসনের উদাসীনতায় ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলেই মাদক সেবন করছে এবং টিকটক বানাচ্ছে। আমি সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং শিক্ষকদের ১৪ মাসের বেতন বকেয়া হওয়ার কারণ জানতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করি। কিন্তু অজানা কারণে তদন্ত আসছে না বা থেমে আছে।

এ সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে সঠিক তদন্ত এবং তার অপরাধের শাস্তি চান।

Read Entire Article