রাঙ্গামাটির লংগদুতে ভারী বর্ষণে নির্মাণাধীন সড়ক বিলীন হওয়ার পাঁচ মাসেও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই পথে যাতায়াতকারী কয়েক হাজার মানুষ। ভোগান্তি বেড়েছে কৃষিপণ্য পরিবহনেও।
জানা যায়, জেলার লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়নের দজরপাড়া হইতে ভুইয়াছড়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার (২৪৫৫ মিটার) দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। গত মে মাসের শেষ দিকে এক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে নির্মাণাধীন সড়কটি ধসে পড়ে। সে সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ঠিকাদার কথা দিয়েছিলেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। তবে সেই প্রতিশ্রুতির পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও সড়কটি নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জানা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই কোটি নয় লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা সড়কটি নির্মাণ কাজের দরপত্র পায়। তবে দরপত্র পাবার প্রায় দুই বছর পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে কাজটি শুরু করেন ঠিকাদার। কাজের শুরু থেকেই ধীরগতির কারণে সমাপ্ত হয়নি সড়ক নির্মাণ। সড়কটির নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত থাকায় এ বছরের মে মাসের শেষদিকে এক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে সড়কটির ইট, পাথর, বালু ভেসে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল চাকমা বলেন, রাস্তাটির নির্মাণকাজ চলেছে প্রায় আট মাস। তবে সড়কটি কার্পেটিং করার আগেই বৃষ্টিতে ধসে যায়। বর্তমানে সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে যে কোনো যানবাহন চলাচল করা সম্ভব না। এতে গত পাঁচ মাস যাবৎ আমাদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
একঘণ্টার বৃষ্টিতে ধসে গেছে সড়কের ইট-বালু
জনপ্রতিনিধি আসে যায়, সংস্কার হয় না সড়ক
একই সড়কে দেড় কোটির কাজ শেষ হতেই ফের দুই কোটির কাজ শুরু
স্থানীয় কার্বারি (পাড়া প্রধান) দ্বীপ্ত জীবন চাকমা বলেন, রাস্তাটি ব্যবহার করার আগেই শেষ হয়ে গেলো। পুনরায় নির্মাণ করার কথা থাকলেও এখনো কাজ শুরু করেনি ঠিকাদার। বর্তমানে এই রাস্তায় চলাচলে ভোগান্তির শেষ নাই। কৃষিপণ্য বাজারে নেওয়া, অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিতে আমাদের কষ্টের সীমা নেই।
লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিনয় চাকমা বলেন, এলাকাটি আমার ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। রাস্তাটি নির্মাণে এখানে তাড়াহুড়ো করে ভরাট মাটির উপর ইট-পাথর বিছানো হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধসে গেছে এবং ইট, পাথর, বালু সব ভেসে গেছে। এখন পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।

সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারের গাফিলতি ও এলজিইডির তদারকির অভাবে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিক্রম চাকমা বলেন, লংগদু ইউনিয়নের ওয়ার্ডগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা এখনো অনেক নাজুক। এই সড়কটি হলে উপজেলা সদরের সঙ্গে ৪টি ওয়ার্ডের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। আমরা চাই দ্রুত সড়কটি নির্মাণ করে জনসাধারণের চলাচলের উপযুক্ত করা হোক।
বৃষ্টিতে সড়কটি ধসে যাওয়ার পরপরই সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম। কিন্তু গত পাঁচ মাসেও সড়কটি পরিদর্শন করতে পারেননি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়কের কাজ চলমান অবস্থায় ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বেশ কিছু স্থানে ধসে গেছে। এসব স্থানে গার্ডওয়াল দিতে হবে, নাহলে রাস্তা টিকিয়ে রাখা যাবে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
তিনি আরও বলেন, সড়কটি নির্মাণের জন্য মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু করতে পারবো। আশা করি দুই মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা যাবে।

সড়কটি নির্মাণে তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে আছে এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন। তিনি জানান, প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় এলজিইডির জেলা অফিস থেকে। সড়ক নির্মাণের যাবতীয় তথ্য জেলা অফিসেই সংরক্ষিত আছে। আমিসহ আরও একজন সহকারী প্রকৌশলী তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তবে সড়কটি ধসে যাওয়ার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা হয়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেছি।
উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, আমি শুনেছি সড়কটি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কাজ যেহেতু এখনো শেষ হয়নি তাই ঠিকাদারকে সড়কটি পুনরায় নির্মাণ করে দিতে হবে। শীঘ্রই সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।
আরমান খান/এমএন/এমএস

14 hours ago
5









English (US) ·